ফেসবুক গ্রুপ খোলার নিয়ম এবং কিভাবে Facebook গ্রুপ দ্রুত বড় করা যায় তার টিপস

ফেসবুক গ্রুপ এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আগে বিভিন্ন পেজ খুব ইউজ করা হতো কিন্তু পেজের স্থান টি গ্রুপ দখল করে নিচ্ছে বলেই আমি মনে করি।
বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক, বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলদা গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। যেমন বাচ্চাদের যত্ন নিয়ে গ্রুপ, পোশাক নিয়ে গ্রুপ, বই নিয়ে গ্রুপ ইত্যাদি।


একেকটি গ্রুপের উদ্দেশ্য ও বিষয় আলাদা। কিন্তু একটি বড় গ্রুপ থাকলে সেটা যদি অনেক মেম্বার এর গ্রুপ হয় তাহলে কিন্তু অনেক লাভ ই পাওয়া যেতে পারে।
যেমন নিজের প্রোডাক্ট সেল করা, নিজের লেখা বই এর প্রচারণা করা, অন্যান্য সেবা দেওয়া ইত্যাদি।

কিভাবে ফেসবুক গ্রুপ খুলবেন বা তৈরি করবেন? 

গ্রুপ তৈরি করা খুব কঠিন কিছু না। ফেসবুক গ্রুপ সেকশনে প্রবেশ করলে দেখবেন উপরে বা পাশে Create Group লেখা থাকে। সেটা তে ক্লিক করুন আর আপনার গ্রুপ খুলুন। 
Facebook Group খোলা সহজ কিন্তু গ্রুপ কে বড় করা কঠিন। আজকে এই পোস্টে দেখানোর চেষ্টা করবো কিভাবে গ্রুপ বড় করবেন বা সদস্য বাড়াবেন।

Facebook গ্রুপ বড় করার টিপস 

বিষয়ঃ আপনার গ্রুপ কিসের উপর হবে? কোন টপিকের উপর ভিত্তিক করে আপনার গ্রুপ চলবে এটা আগে ঠিক করুন। জগা মগা সব একসাথে মিশিয়ে গ্রুপ করে লাভ নাই। এর চেয়ে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে গ্রুপ করুন।


গ্রুপের নামঃনাম বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সুন্দর নাম ই অনেক সময় নতুন মেম্বারদের এড হতে উৎসাহ তৈরি করে। আপনার গ্রুপের টপিকের সাথে মিল রেখে নাম ঠিক করুন। লক্ষ রাখার চেষ্টা করবেন নাম যাতে সহজ হয়।


গ্রুপ প্রাইভেসিঃ ফেসবুকে ২ ধরনের গ্রুপ করা যায়। পাবলিক এবং প্রাইভেট গ্রুপ। আপনার গ্রুপ যদি মেয়ে কেন্দ্রিক এবং খুব বেশি নিরাপত্তার চিন্তা না থাকে তাহলে আয় করার জন্য গ্রুপ করলে সেই গ্রুপ পাবলিক রাখায় ভালো। এতে করে পোস্ট শেয়ার করা, বেশি মানুষের কাছে রিচ করার সুযোগ বেশি থাকে। 


গ্রুপের কভার ফটোঃ নাম ও টকের সাথে মিল রেখে কাভার ছবি দিন। ছবি তে গ্রুপের উদ্দেশ্য, লক্ষ এসব নিয়ে বুলেট পয়েন্ট করে লিখে দেওয়া জেতে পারে যাতে কেউ গ্রুএ আসলেই ছবি দেখে বুঝতে পারে গ্রুপ টা কি নিয়ে। 


ইনভাইটঃ আপনার ফ্রেন্ডের ইনভাইট তো করবেন ই , সাথে সাথে আপনার ফ্রেন্ডের ও বলবেন তাদের ফ্রেন্ডের কেও গ্রুপে ইনভাইট করতে। ইনভাইট চাইতে আর রিকোয়েস্ট করতে দ্বিধা করবেন না। আবার সবাই কে গ্রুপ নিয়ে বিরক্তও কইরেন না। বুঝে শুনে অনুরোধ করবেন।  অনেকে ইনভাইট ব্লকে থাকে, অনেকে গ্রুপে ইনভাইট পছন্দ করে না এসব মাথায় রাখবেন। 


এডমিনঃ গ্রুপ এর এডমিনদের অবশ্যয় সতর্ক হতে হবে এবং গ্রুপে বেশি একটিভ হতে হবে। 


মোডারেটরঃ আপনার গ্রুপ যেই বিষয়ে কাজ করবে সেই বিষয়ে জানা শুনা আছে এমন কিছু  বিশ্বস্ত মানুষদের মোডারেটর হিসাবে নিয়োগ দিন। তারা ফেসবুক এ এক্টিভ কিনা এটাও নজরে রাখবেন। কেননা মোডারেটরদের গ্রুপে বেশ সময় দিতে হবে। মোডারেটররা গ্রুপে সময় দিলে বা গ্রুপ বড় হলে তাদের সুবিধা কি এসব আগে থেকে জানিয়ে নিতে পারেন। কারন ফাউ কাজ কে করতে চাই বলেন?  

 উপরের গুলো হলো গ্রুপ খোলার শুরুর অবস্থা। গ্রুপ তৈরি হয়ে গেলে এবং বেশ কিছু  মেম্বার এড হয়ে গেলে এবার যেতে হবে পরের ধাপে এবং এই ধাপটি বেশ জরুরী কারন শুরুর দিকেই যদি ঠিক মত গ্রুপে মেম্বার বাড়াতে না পারেন তাহলে সেই গ্রুপ আর সহজে বড় হতে পারে না।


কন্টেস্ট আয়োজনঃ প্রথমে নিজের টাকা খরচ করে কন্টেস্ট আয়োজন করুন। মেয়েদের সেলফি দিয়ে কন্টেস্ট করা এসব চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন কিছু ভাবুন।কারন মেয়েদের ছবি দেখিয়ে যেসব মেম্বার আসবে তারা আপনার কোন কাজে আসবে না, ওরা চাই শুধু নারীর দেহ আর এজন্য আপনার গ্রু ঘুরেই চলে যাবে অন্য কোন এডাল্ট পেজ বা গ্রুপে। তাই মেয়েদের ছবি দিয়ে কন্টেস্ট বাদে অন্য কিছুর প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। যেমন

  1. বই এর ছবি,
  2. রিভিউ প্রতিযোগিতা, 
  3. মেম্বার ইনভাইট কন্টেস্ট ( যারা বেশি মেম্বার ইনভাইট করবে তাদের পুরস্কার দেওয়া) 
  4. ইত্যাদি 

আবার যারা এক মাসে সব চেয়ে বেশি এক্টিভ তাদেরকেও ঢাল তলোয়ার পিটিয়ে পুরস্কার দিতে পারেন যাতে অন্যরা তা দেখে গ্রুপে একটিভ হওয়ার দিকে ঝুকে। 

 
গেট টুগেদার আয়োজনঃছেলে মেয়েদের আলাদা আলাদা গেট টুগেদার আয়োজন করবেন। এতে গ্রুপের ব্যাপারে পজিটিভ মনোভাব তৈরি হবে আর এভাবে করলে মেয়েরা মেয়েরা মজা করতে পারবে, পুরুষদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আবার পুরুষরাও যখন আলাদা করবে তারাও মন খুলে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে নারী কেলেঙ্কারি হওয়ার চান্স কম থাকবে। ( গ্রুপ বড় হলে প্রতিপক্ষ নারী Scandal ছড়ানোর চেষ্টা করে তাই নারী পুরুষ গ্রুপের কোন অনুষ্ঠানে এক সাথে না আনাই ভালো, অনেকটা রিস্ক ফ্রি) 


টিভি রিপোর্ট ঃ আপনি যদি গ্রুপের ব্যাপারে সত্যি সিরিয়াস হোন তাহলে খুব চেষ্টা করুন  গ্রুপ নিয়ে জাতীয় পর্যায় টিভি রিপোর্ট পাওয়ার। গ্রুপের কোন অনুষ্ঠান নিয়ে নিউজ করতে সাংবাদিকদের সাথে লেনদেন করার ট্রাই করতে পারেন।জাতীয় পর্যায় না পারলেও লোকাল চ্যানেল, পত্রিকা, অনলাইন নিউজ সাইট গুলোতে যোগাযোগ করুন।


বাংলাদেশ ভারতের মানুষদের মধ্যে টিভিতে কাউকে দেখানো মানে অনেক কিছু এই মনোভাব এখনো রয়ে গেছে হিহিহি!! আর এই কিছু একটা মনোভাব কে কাজে লাগিয়েই গ্রুপ কে দাড় করানো যেতে পারে।  

বিজ্ঞাপনঃ আপনার গ্রুপ যে টপিকের সেই টপিকের ওয়েব সাইট, লোকাল নিউজ সাইট ইত্যাদি তে অল্প টাঁকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি গাছের গ্রুপ করেছেন, আপনার গ্রুপে গাছ কেনা বেচা হয়। এখন আপনি গাছ বা কৃষি রিলেটেড ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপন দিন। এতে করে ওইসব সাইটে যারা ভিজিট করবে তাদের কাছে আপনার গ্রুপটি পৌছাতে পারবে আশা করা যায়। 

উপরে দেওয়া সব টিপস ই Fail করবে যদি আপনার গ্রুপে আপনি ভেলুয়েবল পোস্ট না দেন। গ্রুপ সচল রাখতে অবশ্যয় সুন্দর এবং কার্যকর পোস্ট নিয়মিত দিতে হবে। কমেন্ট, শেয়ার এসব যত বেশি হবে গ্রুএর রিচ তত বাড়বে আশা করি। 

ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করার উপায় 

ফেসবুক গ্রুপ থেকে নানা ভাবেই আয় করা যায়। আমি কিছু উপায়ের লিস্ট দিচ্ছি আপনারা সেটা দেখে ধারনা নিতে পারেন।

প্রোডাক্ট সেল করে টাকা আয়ঃ 

আপনার গ্রুপ যদি বড় এবং এক্টিভ হয় তাহলে সেখানে আপনি প্রোডাক্ট সেল করে টাকা আয় করতে পারেন। 

পেইড পোস্টঃ 

আপনার গ্রুপ বড় হলে অনেকেই সেখানে তাদের সেল পোস্ট বা তাদের ব্যবসায়িক পোস্ট করতে চাইবে। গ্রুপের এডমিন হিসাবে আপনি এই ধরনের পোস্ট এর জন্য ফি নিতে পারেন।

সেলার কোড সেল ঃ

 সেলার কোড এর ফি বাবদ টাকা নিতে পারেন।

ডোনেশনঃ

 ঠিক ডোনেশন না, আমার মতে ঘুষ হিহিহি!! গ্রুপে বাড়তি সুবিধা পেতে অনেক সেলার উপহারের নামে বিভিন্ন কিছু এডমিন মোডারেটরদের দিয়ে থাকে!! আমি তাই এটাকে ঘুষ বলি!! টাকা দিয়ে সুবিধা আদায়ের ফেসবুক ভার্সন(!) 


গ্রুপ সেল করে টাকা আয়ঃ অনেকে আছে গ্রুপ তৈরি করতে পারে তারা গ্রুপ বানিয়ে বিক্রি করে দেয়। যাদের বিভিন্ন সাইট আছে তারা মূলত এসব গ্রুপ কিনে থাকে। 

ফ্রি খাবারঃ 

এটা বিশেষ করে ফুড রিলেটেড গ্রুপ গুলোতে হয়। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় ফুড গ্রুপ এর এডমিন দের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ  ই প্রমানিত হয়েছে যে তারা তাদের ২/৩ লাখ মেম্বারের গ্রুপে মিথ্যা পজিটিভ রিভিউ দেয় ফুল ফামিলি ডিনার এর বিনিময়ে!! আবার অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক গ্রুপের এডমিনদের ঘুষ দিয়ে থাকে যাতে করে তাদের গ্রুপে রেস্টুরেন্ট এর ব্যাপারে নেগেটিভ রিভিউ পোস্ট এপ্রোভ না করে!!


আমার মতে এগুলো হইলো ছ্যাঁচড়ামি!! নাদান এর মত কাজ এবং অনৈতিক। কেননা আরেকজনের ভালো খাবারের ব্যাপারেও মিথ্যা রিভিউ দিয়ে তার লস করানো আবার ঘুষ খেয়ে মেম্বারদের কাছে বাজে রেস্টুরেন্ট এর ব্যাপারে ভালো রিভিউ দিয়ে মেম্বারদের প্রতারিত করা অপরাধ ছাড়া কিছু না।
যাই হোক আপনারা যারা গ্রুপ খোলার চিন্তা করছেন এবং গ্রুপ থেকে আয় করার ইচ্ছা আছে তাদের বলবো খারাপ পথ ঘুষ খাওয়া উপহারের নামে ২ নাম্বারি করা এসব বাদেও আরো অনেক উপায়ে আপনি গ্রুপ থেকে টাকা কামাইতে পারবেন। সেদিকে চেষ্টা করুন, সম্মানের সাথে মাথা উচু করে চলতে পারবেন। বলতে পারবেন আমার গ্রুপে কোন  অইসলামিক কিছু হয় না। 

ফেসবুক Group হ্যাকিং থেকে নিরাপদ রাখার উপায় 

গ্রুপ একটু বড় থেকে বেশ বড় হলেই অনেকে আপনার পিছনে লাগতে পারে। বিশেষ করে আপনি যে বিষয়ে কাজ করছেন সেই একই বিষয়ে কাজ করা অন্য কেউ আপনার উপরে উঠা ভালো ভাবে নাও নিতে পারে। গ্রুপ চুরি করা সহ অনেক কিছুই তারা করতে পারে।


এজন্য আপনার কিছু করনীয় আছে।যেমন মেম্বার এড করার সময় বুঝে শুনে এড করা। স্প্যাম করবে এমন পাবলিকদের ব্লক করে দেওয়া। সবার সাথে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলা। কেনো পোস্ট এপ্রভ হলো না এসব ভালো ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া। অনিয়ম না করা। একজন কে বেশি সুযোগ দিয়ে আরেক জনের সাথে অবিচার না করা।এসব দিকে নজর রাখা উচিত। মোট কথা অনিয়ম অবিচার থেকে বেচে থাকবেন যাতে কেউ কষ্ট পেয়ে আপনার পিছনে না লাগে। 

Leave a Comment