বাংলাদেশে সালাফি বিদ্বেষ ও বাস্তবতা – আসিফ আদনান

বেশ ক’বছর ধরে অনলাইনে ‘সালাফিব্যাশিং’-এর একটা ইন্ট্রেস্টিং ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। মুসলিমদের মধ্যে মাসলাকগত দ্বন্দ্বের ব্যাপারটা নতুন না। বিভিন্ন ঘরানার আলিমসহ সাধারণদের একে অপরের সমালোচনা করার প্রবণতাও পুরনো। কিন্তু সালাফি বিরোধিতার নতুন ট্রেন্ডটা ইন্ট্রেস্টিং কারণ এই বিরোধিতাকে এক ধরণের নৈতিক অবস্থান থেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সালাফি ধারার দাওয়াহকে ঢালাওভাবে ‘দরবারী’ এবং ‘সুবিধাবাদী’ ইসলাম বলা হচ্ছে। যারা বিরোধিতা করছেন তারা ‘দরবারী’ এবং ‘সুবিধাবাদী’ ইসলামের বিরুদ্ধে – অনেকটা এমন আরগুমেন্ট। এছাড়া, সালাফিরা শাসকের পেট্রোডলারে এসি রুমে দাওয়াহ করে। ঢাকার রাস্তায় কিংবা গ্রামের মাসজিদে ঘুরে ঘুরে শবে বরাত পালনের অথেনটিক আনন্দ তারা বোঝে না। তাই বিদআত বলে বিরোধিতা করে, এমন আরগুমেন্টও দেখেছি!

.বিভিন্ন মাসলাকের অনুসারীরা নানা কারণে একে অপরের সাথে তর্কবিতর্ক করবে, আমরা যতোই চাই না কেন কেবল সদিচ্ছা দিয়ে এসব দ্বন্দ্ব বন্ধ হবে না। এ বাস্তবতা আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্বীকার করে নিয়েছি। কিন্তু সালাফি বিরোধিতার এই নতুন ট্রেন্ডের ব্যাপারে দুটো কারণে আমার আপত্তি আছে-

প্রথমত, সালাফিদের ঢালাওভাবে দরবারী বলা, সঠিক না।

.দ্বিতীয়ত, ইলমী কিংবা মাসলাকগত কারণে কেউ যদি সালাফিদের বিরোধিতা করতে চায় তাহলে করতে পারে। চাইলে বিদ্বেষবশতও করতে পারে। এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু বিরাগপ্রসূত বিরোধিতাকে নৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা উচিৎ না।

‘দরবারী’ হওয়াটাই যদি মূল আপত্তির কারণ হয় তাহলে এ বাস্তবতা স্বীকার করা উচিৎ যে, দরবারী কার্যক্রমে সালাফিদের কোন ধরণের মনোপলি নেই।.আজকে প্রথম কথাটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। পরের কথাটা অন্য কোন দিন। .সালাফিদের ঢালাওভাবে দরবারী আখ্যা দেয়া জাস্ট প্লেইন রং।

সালাফি আন্দোলনের ব্যাপারে নূন্যতম ধারণা থাকা যে কেউ এ কথাটা এক বাক্যে স্বীকার করে নেবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকালকার অধিকাংশ মানুষ অধিকাংশ বিষয়ে নূন্যতম ধারণা ছাড়াই কথা বলে। কষ্ট করে ‘শোনা কথার’ যথার্থতা যাচাইয়ের চেষ্টা কেউ করে না। ফলে মানুষের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে একটা ভুল ধারণাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যায়।

.দরবারী বলতে মূলত ঐ সব আলিমদের বোঝানো হয় যারা শাসকগোষ্ঠীর কুফর, ফিসক এবং যুলুমের সাফাই গায়। শরীয়াহর অপব্যাখ্যা করে শাসকগোষ্ঠীর এসব কাজকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে, এবং শাসকদের যেকোন ধরণের বিরোধিতাকে অবৈধ এবং অন্যায় সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে। ব্যক্তি এবং প্রেক্ষাপট অনু্যায়ী এখানে ছোটখাটো সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে, তবে মোটাদাগে এগুলো হল ‘দরবারী’ হবার বৈশিষ্ট্য।

.নিঃসন্দেহে সালাফিদের মধ্যে একটা ধারা আছে যারা অনেক আগ্রহ এবং উৎসাহের সাথে এই কাজটা করে। এরা জামী-মাদখালী নামে পরিচিত। এই ধারার ইতিহাস এবং বিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই, সংক্ষেপে কিছু কথা বলছি। জামী-মাদখালীদের জন্ম নব্বইয়ের দশকে সাউদি আরবে। উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। সাউদি শাসকগোষ্ঠী এ সময় আরব উপদ্বীপে মার্কিন সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

বিভিন্ন জনপ্রিয় বক্তা এবং আলিম এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এসময় সাউদিতে বেশ শক্তিশালী একটি আন্দোলন তৈরি হয় যাকে ‘সাহওয়াহ আন্দোলন’ বলা হয়। সাফার আল হাওয়ালি এবং সালমান আল আউদাহ ছিলেন এই আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিদের অন্যতম।

.এই আন্দোলনের কাউন্টার ব্যালেন্স হিসেবে উত্থান ঘটে জামী-মাদখালী ধারার। এই ধারার অনুসারীরা শাসকের প্রতি আনুগত্যকে; বিশেষ করে আলে সাউদের প্রতি আনুগত্যকে মৌলিক আকীদাহর বিষয় মনে করে। শাসকের বিরুদ্ধে যেকোন ধরণের বক্তব্য বা কাজকে খারেজি-তাকফিরি হবার বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করে, এবং নিজেদের বাইরে অন্য সব ধারাকে (সালাফি এবং নন-সালাফি) বিদআতি মনে করে।

.স্বাভাবিকভাবেই এই ধারার চিন্তাভাবনা সরকারদের অনেক পছন্দ হয়, এবং ধীরে ধীরে তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এ ধারার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন ও আছেন। অনেকে বলে থাকেন এই ধারার উত্থানের পেছনে ইন্টিলেজেন্স এজেন্সির ভূমিকা ছিল। এছাড়া এই ধারা শাসকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু থেকেই পেয়ে আসছে। বর্তমানে সাউদি, লিবিয়া, মিশরসহ বিভিন্ন দেশে এদের অবস্থা বেশ শক্তিশালী। ইংল্যান্ডেও এদের একটা সক্রিয় অবস্থান আছে।

.ওপরে যা বললাম, তা বেশ লম্বা এবং জটিল ইতিহাসের সরলীকরণ। তবে আমাদের আলোচনার জন্য এটুকু যথেষ্ট। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল জামী-মাদখালীরা বৃহত্তর সালাফি আন্দোলনের মধ্যে একটা ধারা মাত্র। তারা সালাফিয়্যাহর একক প্রতিনিধিত্বকারী না। সালাফি আন্দোলন মনোলিথিক না। কাফের-মুসলিম, সবাই একথা স্বীকার করে।

.মার্কিন সরকারের লোক এবং কাউন্টার টেরোরিসম অ্যানালিস্ট কুইনটন উইকটরোউইটযের মধ্যে সালাফিদের মধ্যে মূল ধারা তিনটি – পিউরিস্ট, অ্যাকটিভিস্ট এবং জি-হা-দি সালাফি। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক ‘কোয়াটিস্ট’ (Quietist) নামে চতুর্থ একটি ধারার কথা বলে। অন্যদিকে ড. তারেক আব্দুল হালিমের মতো মুসলিম বিশ্লেষকদের মতে সালাফিদের মধ্যে মোট ধারা ৮টি বা ৯টি। এভাবে বিভিন্ন ধরণের বিশ্লেষক সালাফিদের বিভিন্নভাবে ভাগ করেছেন।

.এসবগুলো বিশ্লেষণ যে সঠিক, তা না। কিন্তু সবাই এব্যাপারে একমত যে সালাফি আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন ধারা আছে। অন্যান্য সালাফি ধারাগুলো জামী-মাদখালীদের মূলনীতি এবং অবস্থানগুলো অনুসরণ করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান জামী-মাদখালীদের বিপরীত। ইন ফ্যাক্ট যাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামী-মাদখালীদের উত্থান সেই সাহওয়াহ-ও একটি সালাফি ধারা। মাদখালীরা দিনরাত যাদেরকে খাওয়ারিজ এবং তাকফিরি বলে তারাও সালাফি। এই পার্থক্যগুলোর উপস্থিতি বোঝা এবং স্বীকার করা আবশ্যিক।

এবং এসব কারণে সালাফি ধারাকে ঢালাওভাবে ‘দরবারী’ বলা বাস্তবতার নিরিখে ভুল।.সালাফি আন্দোলনের মূল ধারা দরবারী – এ কথা বলাও আমার মতে সঠিক না। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে সালাফি আন্দোলনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয় শাইখ বিন বায, শাইখ ইবনু উসাইমীন এবং শাইখ আল-আলবানীকে রাহিমাহুমুল্লাহ।

একথা সত্য যে এর প্রথম দু’জন সাউদি শাসকগোষ্ঠীর নৈকট্যপ্রাপ্ত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় এস্টাবলিশমেন্টের অংশ ছিলেন। সময়ে সময়ে হয়তো শাসকের মনমতো ফাতাওয়াও দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অবস্থানের সাথে জামী-মাদখালীদের অবস্থানকে মেলানো যায় না। তাঁরা বিভিন্ন দেশে মুসলিম আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠীর সবধরণের বিরোধিতাকে তাঁরা অবৈধ সাব্যস্ত করেননি, ভিন্নমতের সকলকে বিদআতি আখ্যা দেন নি, ইমান-কুফরের সংজ্ঞায় ইরজায় আক্রান্ত হননি। এরকম অনেক ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে।

অন্যদিকে শাইখ আল-আলবানী কখনোই শাসকগোষ্ঠীর কাছাকাছি অবস্থান করেননি, বরং তিনিও উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সাউদি সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন।.তারপরও এক অর্থে শাইখ বিন বায এবং শাইখ ইবনু উসাইমিনদের দরবারী বলা যেতে পারে।

কিন্তু আমি যতোটুক বুঝি সেই বিস্তৃত সংজ্ঞাকে সাধারণত গ্রহণ করা হয় না। সেই সংজ্ঞা গ্রহণ করা হলে পাকিস্তানের আদালতে কাজ করা কিংবা হোসনি মোবারক বা সিসির পক্ষে দেয়া বক্তব্য ও ফাতাওয়ার সুবাদে ঢালাও ভাবে দেওবন্দী এবং আজহারী আলিমদের মূলধারাকেও দরবারী বলা যায়।

সৌদি শাসকের হয়ে কাজ করলে, তাদের অপরাধের বৈধতা দিলে দরবারী কিন্তু পাকিস্তানী অথবা মিশরীয় শাসকের জন্য কাজ করলে হকপন্থী, এমন বিভাজন নিশ্চয় সঠিক হতে পারে না, তাই না? তবে যাই হোক, আমি যে ট্রেন্ডের কথা বলছি সেখানে ‘দরবারী আলিমের’ এই বিস্তৃত সংজ্ঞা গ্রহণ করা হয় না। কাজেই সালাফিদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে এটার প্রয়োগ করা ইনসাফ না।

আর কেউ যদি এই বিস্তৃত সংজ্ঞা সব মাসলাকের ক্ষেত্রে গ্রহণ করে, তাহলে সেটা ভিন্ন আলাপ।.এছাড়া যে গত ছয় দশকে পশ্চিম সমর্থিত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এবং সরাসরি পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেখানেই প্রতিরোধ ও বিপ্লব হয়েছে সেখানে সালাফিদের শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল এবং আছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আজ সাউদি আরবের জেলে শত শত সালাফি আলিম বন্দী, এটাও বাস্তবতা। তাঁদের মধ্যে শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ এবং আব্দুল আযীয আত-তারিফীর মতো নিরেট ইলমী মানুষ আছেন। সাফার আল হাওয়ালি এবং সালমান আল-আউদাহর মতো ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা একসময় সাউদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাকটিভিসম করেছেন। পরে জেলে গেছেন। জেল থেকে বের হয়ে সরকারের ব্যাপারে অবস্থান নরম করেছেন, একধরণের বোঝাপড়ায় গেছেন।

তারপর আবার গতো কয়েক বছর আগে গ্রেফতার হয়েছেন। আবার এদের মধ্যে শাইখ ওয়ালিদ আস-সিনানী, সুলাইমান আল-উলওয়ানের মতো ব্যক্তিরা আছেন যারা একেকজন ২৫, ২০, বছর ধরে বন্দী থাকা সত্ত্বেও সাউদি সরকারের সাথে আপোষ করেননি। নিজেদের নীতি থেকে এক চুল নড়েননি। এর আগে শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুআইবির রাহিমাহুল্লাহ মতো ব্যক্তি বন্দী ছিলেন যারা সরাসরি সাউদির শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ফাতাওয়া দিয়েছেন।

হাওয়ালি বা আউদাহর মতো তাঁদের নিয়ে মিডিয়াতে তেমন মাতামাতি না থাকলেও, এসব ব্যক্তির আপসহীন অবস্থানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। .এই আলিমরা সবাই সালাফি। তারা নিঃসন্দেহে দরবারী না। কারণ শাসকগোষ্ঠীই তাঁদেরকে বন্দী করে রেখেছে। তাঁরা পেট্রোডলার পান না, বরং পেট্রোডলার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এবং তাঁরা যদি শবে বরাত বা অন্য কোন কিছুর বিরোধিতা করেন সেটা এসি রুমে বসে করেন না, জেলের মাটিতে বসে করেন।

আরাম কিংবা সুবিধার কারণে করেন না, শরীয়াহর দলীলের ভিত্তিতে করেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করেন তারাও টাকা কিংবা এসির বাতাসের জন্য সেটা করেন না। এই সব কিছু উপেক্ষা করে সালাফিদের ঢালাও ভাবে ‘দরবারী’ জাতীয় কিছু সাব্যস্ত করা ভুল, এবং না-ইনসাফী। এ কথাটা বোঝা খুব কঠিন কিছু না। নিজের সাথে সৎ হলে যে কোন সালাফি-বিরোধীও এটা স্বীকার করতে পারবে। .সালাফি দাওয়াহর ব্যাপারে মানুষের ইলমী আপত্তি থাকতে পারে। কেউ দলীলের ভিত্তিতে তাঁদের অবস্থানের বিরোধিতা করতে পারেন। কারো মধ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে।

কেউ মাসলাকগত আনুগত্য কিংবা বিদ্বেষের বশেও বিরোধিতা করতে পারেন। মানুষকে জনে জনে থামানো তো সম্ভব না। কিন্তু বিরোধিতা করলে সেটার কারণ সরাসরি বলা ও স্বীকার করা উচিৎ। যার আপত্তি ইলমী জায়গা থেকে সে কখনো তার বিরোধিতাকে বৈধতা দেয়ার জন্য অজুহাত টানবে না। সে শারঈ দলীলের ভিত্তিতে বিরোধিতা করবে।

কিন্তু গতো কয়েক বছর ধরে অনলাইনের সালাফি ব্যাশিং এর ক্ষেত্রে ‘দরবারী’ হবার অভিযোগ তুলে মূলত সালাফি বিদ্বেষকে একটা গ্রহণযোগ্য চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

কিন্তু একটা মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করে সেটার আড়ালে নিজের বিদ্বেষকে নৈতিকতার পোষাক পরানোর এই কৌশল দীর্ঘমেয়াদে খুব একটা কার্যকরী না। সব মানুষকে কোন না কোন সময় বোকা বানানো যায়। কিছু মানুষকে সবসময় বোকা বানানো যায়। কিন্তু সবাইকে সবসময় বোকা বানানো যায় না।

অনলাইনে সালাফিব্যাশিং এর নতুন ট্রেন্ড দুটো কারণে ডিসেপটিভ এবং ভুল বলেছিলাম-

১। সালাফিদের ঢালাও ভাবে ‘দরবারী’ বলা বাস্তবতার নিরিখে ভুল

২। ‘দরবারী’ কর্মকান্ডে সালাফিদের মনোপলি নেই। সব মাসলাকের লোকই বিভিন্ন মাত্রায় এ দোষে দোষী। প্রথম পয়েন্ট নিয়ে আগের লেখায় বলেছিলাম।

এবার দ্বিতীয় পয়েন্টের দিকে তাকানো যাক। .শরীয়াহর অপব্যাখ্যা করে শাসকগোষ্ঠীর ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের সাফাই গাওয়া, এবং তাদের যুলুম, ফিসক ও কুফরকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা এমন একটা অসুখ যার ওপর কোন নির্দিষ্ট স্কুল অফ থটের একচেটিয়া আধিপত্য নেই। বিভিন্ন মাসলাকের মানুষের মধ্যে এটা দেখা যায়। কিন্তু আজকালকার অনলাইন আলোচনায় এ ধরণের প্রবণতার সাথে প্রায় এক্সক্লুসিভভাবে সালাফিদের নাম যুক্ত করা হয়।

এটা করার একটা কারণ হল জামী-মাদখালীদের কর্মকান্ড। ঠিক আছে, ধরে নিলাম জামী-মাদখালীদের কাজের দায়ভার কিছুটা হলেও সামগ্রিক সালাফি আন্দোলনের ওপর আসে। কিন্তু একই ধরণের, কিংবা এর চেয়েও প্রকট ‘দরবারী’ এবং ‘সুবিধাবাদী’ কর্মকান্ড যখন অ-সালাফি ব্যক্তিদের মাঝে দেখা যায়, তখন সেটার দায়ভার কী অন্য মাসলাকগুলোর ওপর বর্তায় না? এই ধরণের কর্মকান্ডের কিছু উদাহরণ দেখা যাক, তাহলে হয়তো আমার প্রশ্নের যৌক্তিকতা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন।

.মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে যে দেশটির শাসকগোষ্ঠী বর্তমানে অ্যামেরিকা এবং ইস্রাইলের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং পশ্চিমের প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী ইসলামের ‘মডারেইশান’ এর এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে সেটা হল আরব-আমিরাত (ইউএই)। আমিরাতের মুহাম্মাদ বিন যাইদ আরববিশ্বে শুধু ইস্রাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র না, বরং সে এক অর্থে মুহাম্মাদ বিন সালমানের গুরুও। বিন যাইদ এবং আমিরাতের অপকর্মের লিস্ট বিশাল। অল্প কিছু বলা যাক।

আমিরাত ইস্রায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, ইস্রায়েলের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করেছে, মিশরে খুনী সিসিকে এবং লিবিয়াতে মার্কিন এইজেন্ট হাফতারকে সাহায্য করেছে। সাউদির সাথে মিলে ইয়েমেন আক্রমন করে তৈরি করেছে মানবিক বিপর্যয়। অ্যামেরিকাতে ৩০টির বেশি ইসলামবিদ্বেষী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন করেছে। মালিতে ফ্রান্সের আগ্রাসনকে আর্থিক ও সামরিকভাবে সহায়তা করেছে। আবু ধাবিতে গির্জা এবং মন্দির তৈরি করেছে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার দান করেছে নরেন্দ্র মোদীকে। ইন্টার-ফেইথের কুফরি আদর্শের চিহ্ন হিসেবে আবু ধাবিতে ‘অ্যাব্রাহ্যামিক হাউস’ তৈরি করেছে, যেটা একই সাথে সিনাগগ, চার্চ এবং ‘মাসজিদ’ [১]। এসব কাজকর্মের পাশাপাশি আমিরাতি শাসকগোষ্ঠী তাদের আশেপাশে বিভিন্ন আলিমদের রেখেছে যাদের কাজ হল বিন যাইদের এসব কর্মকান্ডের সাফাই গাওয়া এবং এগুলোর বৈধতা দেয়া। এসব আলিমদের মধ্যে বিখ্যাত দুজনের নাম বলি। আব্দুল্লাহ বিন বায়্যাহ এবং হামযা ইউসুফ। দুজনেই অ-সালাফি, আশআরী এবং সুফি।

এবং দু’জনেই খুবই উৎসাহের সাথে আমিরাতের এসব কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে [২]। .হামযা ইউসুফের এধরনের কথা এবং কাজের ইতিহাস অবশ্য বেশ পুরনো। চমৎকার বাচনভঙ্গি, চোস্ত ইংরেজি ও আরবীর মিশেলে বক্তব্য, মডার্ন সেন্সিবিলিটি অনুযায়ী আকর্ষনীয় চেহারা, পাণ্ডিত্যসহ নানা কারণে কারণে হামযা ইউসুফ সারা বিশ্ব জুড়ে পরিচিত নাম।

কিন্তু তার ‘সুবিধাবাদী’ কাজগুলোর ব্যাপারে মানুষ তেমনভাবে জানে না। ২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমন করে অ্যামেরিকা যখন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলো, তখন হামযা ইউসুফ ছিল জর্জ ডাবিউ বুশের একজন উপদেষ্টা। কংগ্রেসে বুশের যুদ্ধ ঘোষণার ভাষণ শুনে যারা তালি দিচ্ছিলো হামযা ইউসুফ ছিল তাদের অন্যতম[৩]।

২০১৯ সালে গঠিত ট্রাম্পের প্রশাসনের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিল ইউসুফ। [৪]। হামযা ইউসুফ মনে করে ইসলাম এবং সেক্যুলারিসমের মধ্যে মৌলিক কোন সংঘাত নেই এবং ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা একটা ফ্যান্টাসি [৫]। কোন মাদখালী এককভাবে এতোগুলো কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। .ইউসুফ আরো মনে করে ইসলামে ‘খিলাফাহ’র কোন প্রয়োজন নেই এবং এটা মুজমা আলাইহ! [৬]

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে হামযা ইউসুফ মনে করে, ফিলিস্তীনের মুসলিমদের উচিৎ সব ধরণের ‘সহিংসতা’ বন্ধ করা এবং বিশ্ববাসীকে বলা-‘আমরা দুর্বল, আমরা অসহায়, আমাদের সাহায্য করো’। এটুকু করলেই নাকি বিশ্ব তাদের প্রতি সহমর্মী হয়ে সাহায্য করবে। কিন্তু পাথর ছুড়ে, আগ্রাসনের প্রতিরোধ করে ফিলিস্তিনীরা আসলে ভুল করছে [৭]।

সিরিয়ার ব্যাপারে ইউসুফ হাসতে হাসতে বলে, সিরিয়ার মুসলিমরা আজ নির্যাতিত হচ্ছে কারণ তারা বাশারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। এ কারণেই তাঁরা আজ অপমানিত এবং লাঞ্ছিত [৮]। এছাড়া ইস্রাইলের সাথে আমিরাতের ‘শান্তিচুক্তির’ পর হামযা ইউসুফ এবং আব্দুল্লাহ বিন বায়্যাহ মার্কিন উগ্র যায়োনিস্ট প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি ডেফেমেইশান লীগের সাথে ইন্টার-ফেইথের ব্যানারে মত বিনিময় সভা করেছে [৯]।

হামযা ইউসুফের এসব বক্তব্য তার অসংখ্য ভক্ত সমর্থন করেছে। এসব ভক্তের মধ্যে মুহাম্মাদ গিলানের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাক্তি ও দা’ঈও আছে, যারা নানা মেন্টাল জিমন্যাস্টিকস করে ইউসুফের এসব কথাকে বৈধতা দিতে চেয়েছে। .জামী-মাদখালীদের কাজের কারণে যদি সব সালাফি দরবারী হয়, তাহলে বিন বায়্যাহ, হামযা ইউসুফ এবং সমগোত্রীয়দের কারণে সব সুফি কিংবা সব আশ’আরীকে কেন দরবারী মনে করা হবে না? কনসিসটেন্সি কোথায়? .

অবশ্য হামযা ইউসুফের কর্মকান্ডকে রমাদান বুতির তুলনায় একেবারে হালকাই বলতে হয়। যালিম এবং কাফের শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত আল-বুতি স্থাপন করেছে, সেটার ধারেকাছে পৌছানো হয়তো কারো পক্ষ সম্ভব না। সত্তরের দশকের শেষ থেকে ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমাদান (নাকি ‘রমজান’?) আল-বুতি সিরিয়ার নুসাইরি শাসক পরিবার হাফেয আল আসাদের একনিষ্ঠ আনুগত্য করে গেছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর ইজমা অনুযায়ী নুসাইরিরা মুশরিক, কিন্তু ‘আল্লামা বুতি’ হাফেয আল আসাদ এবং তার পুত্র বাশারকে সাচ্চা মুসলিমের সার্টিফিকেট দিয়েছে। হাফেযের জানাযা পড়িয়েছে, তাকে নিজের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছে।

১৯৭৯ সালে সিরিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড এবং আত-তালিয়াতুল মুকাতিলাহ নুসাইরি হাফেযের যুলুম এবং শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। জবাবে হাফেযের বাহিনী হামাসহ সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে ভয়ঙ্কর ম্যাসাকার চালায়। আল-বুতি তখন হাফেযকে সমর্থন করে। .২০১১ সালে যখন সিরিয়াতে বিল্পব শুরু হলে আল বুতি আগের মতোই আসাদ পরিবারের পক্ষ নেয়।

আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী সুন্নি মুসলিমদের ‘আবর্জনা’ আখ্যা দেয়। বাশারের হয়ে আহলুস সুন্নাহর ওপর ধর্ষন এবং ম্যাসাকার চালানো বাহিনীর সদস্যরা যখন নিহত হয় আল-বুতি তাদের মৃত্যুকে সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-এর মৃত্যুর সাথে তুলনা করে! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল-বুতি আহলুস সুন্নাহর ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো নুসাইরি আসাদকে দিয়ে যায়। সিরিয়াতে আসাদ বাহিনী কী করেছে এটা আসলে একটা না দশটা পোস্টেও লিখে বোঝানো সম্ভব না, এই পোস্টের কমেন্টে একটা ছোট্ট উদাহরণের লিঙ্ক দিচ্ছি।

আর যারা মোটামুটি একটা ধারণা পেতে চান তারা সাংবাদিক স্যাম ড্যাগারের ‘আসাদ, অর উই বার্ন দা কান্ট্রি’ বইটি দেখতে পারেন । .আল-বুতির এসব কর্মকান্ডের ফিরিস্তি আমার নিজের বানানো না। শাইখ মুহাম্মাদ আলি আস-সাবুনি রাহিমাহুল্লাহ এর মতো হানাফি, আশআরী আলিমরা আল-বুতির এসবের সাক্ষ্য দিয়েছেন [১০]।

তারপরও আল-বুতির কর্মকান্ডের সাফাই গাওয়ার লোকের অভাব হয় না। এবং আল-বুতির প্রশংসা করা কিংবা তার কর্মকান্ডের প্রচার করার সাথে ঐ ধরণের স্টিগমা যুক্ত করা হয় না যা সালাফিদের ব্যাপারে আজ ঢালাও ভাবে করা হয়। সহজ দুটো উদাহরণ দেই। রমাদান আল বুতি অনেক বড় আলেম। রবী আল মাদখালীও মুহাদ্দিস আলিম।

কেউ যদি রবী আল-মাদখালীর কোন ইলমী লেখা বা প্রবন্ধ অনুবাদ করে তাহলে তাকে ‘মাদখালী’ বলা হবে নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু কেউ যদি আল-বুতির কোন রচনা অনুবাদ করে তখন সেই কাজটার সাথে কোন নেতিবাচক কথা যুক্ত করা হবে না। যদিও ব্যক্তি পর্যায়ে আমার জানা মতে রবী আল-মাদখালী এমন কোন কাজ এখনো করতে পারেনি যা আল-বুতির এসব ভয়াবহ অপরাধের ধারেকাছে যায়। .এবং এটাই হল ফান্ডামেন্টাল ইমব্যালেন্স।

শাসকের অপরাধের সাফাই গাওয়া, যুলুমের প্রতিরোধকে অন্যায় সাব্যস্ত করার মতো কাজ যখন সালাফিদের মধ্যে একটি ধারা করছে তখন ঢালাওভাবে সব সালাফিদের দরবারী বলা হচ্ছে, সুবিধাবাদী ইসলামের কথা বলা হচ্ছে। যদিও এই প্রবণতার সবচেয়ে দালীলিক এবং কড়া সমালোচনা করেছে সালাফিরাই।

অন্যদিকে একই ধরণের কিংবা আরো গুরুতর অপরাধ যখন কিছু সুফী করছে তখন ঢালাওভাবে সব সুফীদের তো দরবারী বা সুবিধাবাদী বলা তো হচ্ছেই না, বরং যারা এই কাজগুলো করছে ইনিয়েবিনিয়ে তাদের পক্ষে অজুহাত দেয়া হচ্ছে। তাদের আলোচনা, রচনাবলী ইত্যাদিকে নরমালাইয করা হচ্ছে। আমি বলছি না যে, ঢালাওভাবে কোন মাসলাককে বা সব মাসলাককে দরবারী বলতে হবে। আমি এধরণের ঢালাও ট্যাগিং এর বিরুদ্ধেই বলছি। তবে আমি এটাও দেখতে পাচ্ছি যে এধরণের ঢালাও ট্যাগিং অন্য কারো ক্ষেত্রে হচ্ছে না, শুধু সালাফিদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। .এধরণের ডাবলস্ট্যান্ডার্ডের আরো অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব।

আল-আযহারের ইসলামকে ‘মডার্নাইয’ (পড়ুন, বিকৃত) করার ঘোষিত এজেন্ডা, নাসের, সাদাত, মোবারক এবং সিসির প্রতি সমর্থন। চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং পুতিনের পোষা কুকুর কাদিরভের আয়োজনে করা ‘সুন্নী ইসলাম’ সম্মেলন। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের নির্যাতন উপেক্ষা করে অর্ধেকের বেশি উইঘুরদের কাফের বলে দেয়া হাবিব আল জিফরির বক্তব্য।

‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর সক্রিয় অংশীদার পাকিস্তানী সরকার এবং না-পাক আর্মির প্রতি- লাল মসজিদ এবং উপজাতীয় অঞ্চলে অমানবিক ‘যারবে আযাব’ অপারেশনের প্রতি বিভিন্ন দেওবন্দী আলিমদের সমর্থন। ‘রামজী’ শিক্ষায় পঞ্চমুখ হওয়া মাদানী সাহেব। আমাদের নিজেদের ঘরের শোকরানা মাহফিল, লক্ষ জনের ফতোয়া, ‘কুকুর কোটায়’ হজ্ব…¬-উম্মাহর রক্তের দাগ আর শাসকের গোলামির কালিমা থেকে কারো হাতই পরিস্কার না। তবু সব কিছু অস্বীকার করে সালাফিদের দরবারী এবং সুবিধাবাদী বলাটা কোন অর্থে ইনসাফ হতে পারে?

বরং আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অন্য সালাফিরা যতো তীব্রভাবে জামী-মাদখালীদের বিরোধিতা করে, খন্ডন করে এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক করে, অন্য মাসলাকের লোকজন সেইভাবে নিজেদের মাসলাকের দরবারী আল্লামাদের ব্যাপারে কথা বলে না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রবণতার বিরোধিতা করা ব্যক্তিরাও ইনিয়েবিনিয়ে ‘বুজুর্গ’দের এসব কাজকে বৈধতা দেয়ার, বা কমসেকম তাদের পক্ষে অজুহাত দেয়ার চেষ্টা করেন।

.এতো সব বাস্তবতার পরও কেউ যদি ঢালাওভাবে সালাফিদের দরবারী বলতে চায় এবং এই প্রবণতাকে শুধু সালাফিদের সাথে সম্পৃক্ত করতে চায়, তাহলে সে হয় অজ্ঞ অথবা অসৎ। অসৎ কারণ সে নিজের বিদ্বেষকে নৈতিকতার পোশাক পরাতে চাচ্ছে এবং সালাফিদের ক্ষেত্রে যে মানদণ্ড ব্যবহার করছে সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে করছে না। আসল কথা হল, আলিম এবং দা’ঈদের জন্য শাসকের কাছাকাছি হওয়া হল ফিতনাহ।

এই ফিতনাহ কোন নির্দিষ্ট মাসলাক কিংবা স্কুল অফ থটের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। মুসলিম জাতির ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে, এবং যে কোন ঘরানার মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হবার পর শাসকের পলিটিকাল এজেন্ডাকে এবং নিজেদের আপসকামীতাকে নিজ ঘরানার ডিসকোর্সের রীতি অনুযায়ী একেকজন একেকভাবে জাস্টিফাই করে।

পার্থক্য এখানেই। .এই ফিতনাহ থেকে যারা বাঁচতে চায় তাঁদের জন্য করণীয় হল প্রথমে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং হক্বপন্থী আলেমদের অনুসরন করা। পাশাপাশি তাঁদের দায়িত্ব হল হক্ব বাতিলের প্রশ্নে মাসলাকগত সংকীর্ণতাকে বাদ দেয়া। দোষ যারই হোক সেটা স্বীকার করার সৎ সাহস রাখা এবং হক্ব যে উৎস থেকে আসুক তা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকা।

–[১] https://twitter.com/nottaalib/status/1389077482570227712[২] https://twitter.com/emarattv/status/1305878736290697218https://5pillarsuk.com/…/shaykh-hamza-yusuf-supports…/ [৩] https://www.youtube.com/watch?v=ti963XL-kAg – ১৫.৫৯ এবং অন্যান্য। https://pbs.twimg.com/media/DRf2IMEWkAAyFRQ?format=jpg… – টোনি ব্লেয়ার এবং লরা বুশের পেছনের সারিতে [৪] https://www.middleeasteye.net/…/muslim-scholar… [৫] https://www.youtube.com/watch?v=BV2biid2SSA [৬] https://www.youtube.com/watch?v=I-acadw1YWU [৭] https://twitter.com/Astudent1r/status/1372948252417425411[৮] https://www.youtube.com/watch?v=1xDF2yW7cQg [৯] https://twitter.com/JGreenblat…/status/1070773889704312833[১০] https://www.youtube.com/watch?app=desktop&sns=fb…

Leave a Comment