ফ্রিলান্সিং করে টাকা আয় করার উপায় সমূহ ২০২২ : ফ্রিলান্সিং এ কি কি কাজ করা যায়?

কিভাবে ফ্রিলান্সিং করে টাকা আয় করবেন সে সম্পর্কে আজকে কিছুটা বিস্তারিত পোস্ট লিখার চেষ্টা করবো। দিন দিন ফ্রিলান্সিং এর চাহিদা ও প্রতিযোগিতা বাড়ছে, অনেকেই এই পথে টাকা ইনকাম করতে আগ্রহি কিন্তু মূল বিষয়ে তারা ভুল করে বিধায় সফল হতে পারে না।

কি কি টপিক থাকছে আজকের পোস্টে

  1. ফ্রিলান্সিং কাকে বলে
  2. ফ্রি লান্সিং কত প্রকার
  3. কিভাবে ফ্রিলান্সার হয়ে টাকা আয় করা যায়
  4. কোথায় ফ্রিলান্সিং করলে আয় করা সম্ভব
  5. কি কি লাগে ফ্রিলান্সার হতে
  6. ভুল পথ ও সঠিক পথ 
  7. মার্কেটপ্লেস গুলো নিয়ে আলোচনা

ফ্রিলান্সিং  কি বা কাকে বলে?

বাংলা ভাষায় মুক্ত পেশাকে ফ্রিলান্সিং বলে আর বই এর ভাষায় হলো কোন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি ছাড়া কোন কাজ করাকে ফ্রিলান্সিং বলে। অর্থাৎ আমার সাইটের জন্য একটা লেখা দরকার আর সেটা আমি আপনার সাথে ৫০০ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করলাম যে আপনি আমার সাইটে লেখা দিবেন বিনিময়ে আমি প্রতিটা লেখার জন্য ৫০০ টাকা করে দিবো।এই যে  লেখার বিনিময়ে টাকা পাচ্ছেন কোন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি ছাড়া, বিজনেসের মত লাখ টাকা ইনভেস্ট ছাড়া এটাই ফ্রিলান্সিং।
ফ্রিলান্সার কে ?যিনি ফ্রিলান্সিং করেন তিনিই ফ্রিলান্সার । 

ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করা যায়

এটা একটা বিশাল প্রশ্ন! কারন কোন কাজ করা যায় না এটা জানা দরকার!ধরতে গেলে ফ্রিলান্সিং এ সব কাজই করা যায়। এমন কি নরমাল ভাবে যেসব কাজ করা সম্ভব না সেসব কাজ ও ফ্রিলান্স মার্কেট প্লেসে করা হয়!!একটা উদাহরণ দেই, ফাইবারে স্ত্রীকে খুশি করতে নাচানাচি থেকে শুরু করে সবই কমন আন কমন কাজ এখানে হয়। 
এবার আসি ফ্রিলান্সিং এর কাজের একটা লিস্ট নিয়ে। নিচে মোটামোটি মূল ধারার কাজের একটা তালিকা দিচ্ছি সেগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন।

লিড জেনারেট ঃ 

লিড জেনারেট এর কাজ বলতে মূলত কোন বিশেষ টপিকে, ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করে এমন কোম্পানি/ বাক্তির পার্সোনাল ইনফোরমেশন কালেক্ট করা।যেমন ধরুন আপনাকে বলা হলো ঢাকাতে থাকা সকল প্রাইভেট ভার্সিটির টিচারদের ইমেল, ফেসবুক প্রোফাইল খুজে বের করতে।একজন টিচারের জন্য ১০ টাকা করে দিবে!এখন আপনি লিড জেনারেট এর বিভিন্ন টুলস ইউজ করে ১০০ জন টিচারের ইনফো বের করলেন। আপনি সেটা জমা দিয়ে পাচ্ছেন ১০০০ টাকা।
আরো বহুত ভাবে বহুত টপিকে লিড জেনারেট এর কাজ হয়। বুঝার জন্য উপরের উদাহরণ দিলাম।কিভাবে লিড জেনারেট করে টাকা আয় করা যায় সেটা জানতে আমাদের লিড জেনারেট নিয়ে করা পোস্ট পড়তে পারেন সেখানে বিস্তারিত পাবেন।লিঙ্কঃ   লিড জেনারেট ১০১

ব্লগ পোস্ট লেখা ঃ কন্টেন্ট রাইটার

অনেকের ওয়েব সাইট আছে কিন্তু তারা লিখতে পারেনা কিংবা তাদের হাতে সময় কম থাকায় লিখার সময় পায় না। তখন তারা তাদের সাইটের জন্য লেখক বা কন্টেন্ট রাইটার হায়ার করে।আপনি যদি লেখালেখি করতে পারেন তাহলে তাদের জন্য লিখে টাকা আয় করতে পারেন।বাংলায় কন্টেন্ট রাইটারদের ভেলু কেমন টা জানিনা, কিন্তু আপনি যদি লেখালেখি কে ফ্রিলান্স পেশা হিসাবে নিতে চান তাহলে বলবো ইংরেজি তে লেখালেখি করার চেষ্টা করুন।

ওয়েব সাইট ডিজাইন করে ইনকাম ঃ

প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন সাইট নেটে যুক্ত হচ্ছে। সবাই ওয়েব সাইট ডিজাইন করতে পারে না। আপনি যদি সাইট ডিজাইনে এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে এক বিষয়েও কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। আপনার দক্ষতা যত বাড়বে আপনার ভেলু ও তত বাড়বে। 

গেস্ট পোস্ট ঃ

আগের এস ই ও নিয়ে পোস্টে গেস্ট পোস্ট নিয়ে কথা আছে। যেহেতু গেস্ট পোস্ট এর চাহিদা আছে সেহেতু অনেকেই মার্কেট প্লেস থেকে গেস্ট পোস্ট লিংক কিনে থাকে।যদিও এটি নতুনদের জন্য না কিন্তু জেনে রাখা আর কি।

ব্যাকলিংক সেল

যারা SEO নিয়ে কিছুটা হলেও জানেন তারা বুঝে থাকবেন ওয়েব সাইটের জন্য ব্যাক লিংক কত জরুরী একটা বিষয়। ফ্রিলান্সিং মার্কেটে Backlink এর চাহিদা বেশ আছে। আপনি যদি ব্যাক লিংক করার অনেক গুলো মাধ্যমের মধ্যে একটা মাধ্যমেও ভালো দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন তাহলে সেটা দিয়েই ফ্রিলান্সিং করতে পারবেন।যেমন ধরুন আপনি ভালো মানের প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারেন তাহলে আপনি প্রোফাইল ব্যাক লিংক এর গিগ খুলতে পারেন।

ভিডিও এডিটিং  করে টাকা আয়

এখন মানুষ ব্লগ পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখে বেশি। ইউটিউব টপ ৫ টা সাইটের একটা সাইট। মানুষ কত টপিকেই না ভিডিও দেখে সময় কাটাচ্ছে।আপনি যদি ভিডিও এডিটিং এর কাজ পারেন তাহলে ফ্রিলান্সার হতে দেরি লাগবে না। কারন এই কাজ টা কিছুটা কঠিন হওয়ায় সবাই এদিকে আসে না।ভালো মানের ভিডিও এডিটর হতে ভালো মানের পিসি লাগবে, দক্ষতা লাগবে। এসব থাকলে বেশ মোটা অংকের ইনকাম করতে আপারবেন।

ছবি এডিটিং ফ্রিলান্সিং 

আমরা যে ফেসবুক টুইটারে নানা রকম বিজ্ঞাপন দেখি,  নানা লেখা সমৃদ্ধ ছবি দেখি  এসব করেও আপনি ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন।আমি এই ছবি এডিটিং সেকশনে মানুষের ছবি এডিট এর কথা বলছি না উৎসাহ দিচ্ছি না কেননা সেটা ৯৯% ক্ষেত্রে হারাম হয়।আপনার এডিট করা বউ এর ছবি ফেসবুক ইন্সটা তে ঘুরে বেড়াবে মানুষ দেখবে!  এতে করে যার ছবি, যে শেয়ার দিচ্ছে, যে এডিট করছে সবার ই পাপ হবে।ইনকাম করার চেষ্টা ভালো তবে সেটা হালাল হওয়া উচিত।

Logo Design করে আয় ঃ

নতুন নতুন হাজার হাজার সাইট আসছে, নতুন কোম্পানি আসছে এসব কোম্পানি গুলোর জন্য লোগো দরকার হয়। সাইটের  জন্য লোগো দরকার হয়। আপনি লোগো ডিজাইন পারলে এটা দিয়েও ফ্রিলান্সিং করতে পারেন।

টি শার্ট ডিজাইন ঃ 

কিছু সাইট আছে যারা টি শার্ট ডিজাইন করে সেল করলে আপনাকে পে করবে। আবার আপনি ফ্রিলান্সিং সাইটে ক্লায়েন্ট এর জন্য কাস্টম ডিজাইন করেও আয় করতে পারবেন।

টাইপিং ঃ

আমি আসলে এটার কথা ভুলে গেছিলাম নাহয় মেবি শুরুতে এটা দিয়েই লেখা শুরু করতাম।টাইপিং করেও আপনি ফ্রিলান্সিং করতে পারবেন। PDF থেকে Word বা ইমেজ থেকে ওয়ার্ড সহ না না টাইপিং এর কাজ পাওয়া যায়।তবে এই কাজ অন্য কাজের তুলনায় সহজ হওয়ায় এই কাজে প্রতিযোগিতা বেশি তাই নতুন হিসাবে আপনার কাজ পেতে বেশ টাফ হবে।

সিভি লেখা ঃ

একজন ভালো সিভি রাইটার এর বেশ কদর এখন। ইভেন বাংলাদেশেও সিভি রাইটারদের দাম বাড়ছে।আপনি যদি ভালো মানের সিভি লিখতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের  বাজারেও টিকে জেতে পারেন।

অডিও এডিটিং ঃ

অনেকে আছে যারা ভিডিও বানাতে কিংবা পডকাস্ট এর জন্য অডিও তৈরি করে কিন্তু তারা জানেনা কিভাবে এর কোয়ালিটি বাড়াতে হবে কিভাবে এডিট করতে হবে।আপনি যদি ে ব্যাপারে দক্ষ হোন তাইলে ফ্রিলান্স মার্কেটে আপনার চাহিদা আছে। ( হারাম মিউজিক বাদ দিয়েন) 

Intro And Outro : 

ভিডিও শুরুর আগের চ্যানেল এর নাম পরিচয় ইত্যাদি যুক্ত শর্ট ক্লিপ দেখে থাকবেন হইতো। মূল ভিডিওর শুরুতে ঐ শর্ট ক্লিপ গুলো কে ইন্ট্রো বলে আর শেষে দেওয়া ক্লিপ কে আউট্রো।আপনি এগুলো দিয়েও ফ্রিলান্স করতে পারেন। 

ভয়েস ওভার ঃ

একজন ভিডিও বানাতে পারে কিন্তু তার কথা বলার ধরন সুন্দর না কিংবা সে ইংরেজি তে তেমন পারদর্শী না। আপনি যদি আপনার বায়ারের সেই ভাষায় সুন্দর করে কথা রেকর্ড করতে পারেন তাহলে ক্লায়েন্ট এর দেওয়া স্ক্রিপ্ট পরে অডিও রেকর্ড করে আপনি মার্কেট প্লেসে ফ্রিলান্সিং করে ভাল টাকা আয় করতে পারবেন।

বই এর কভার ডিজাইন ঃ 

হার্ড বুক কিংবা ই বুক! সব বুকের জন্যই সুন্দর কভার পেজ গুরুত্বপূর্ণ । আর এখন তো ইবুক রাইটারের সংখ্যা বাড়ছে! এরা তাদের বই এর জন্য মানানসই সুন্দর কভার পেজ ডিজাইন চাই। আপনি এদিকেও স্কিল ডেভ্লপ করে কাজে নামতে পারেন।

প্রোফাইল / পেজ ক্রিয়েটর ঃ

এটা কাজ সহজ কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কাজ পেতে মনে হয় কঠিন হয়ে যাবে।নতুন বিজনেস শুরু করছে এমন কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল, পেজ ইত্যাদি প্রফেশনালি তৈরি করাও একটি দক্ষতা। সব ক্যাটাগরি, এড্রেস, সেকশন, বাটন সব ঠিক মত সাজিয়ে প্রোফাইল তৈরি করতে পারলে এই কাজ করেও কিছু টাকা ইনকাম করা যায়।

আসলে ফ্রিলান্সিং  এ কাজের অভাব নাই। প্রচুর কাজ আছে। কিন্তু আপনাকে সেসব কাজ পেতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভাষায় দক্ষ হতে হবে যাতে ক্লায়েন্ট এর সাথে ক্লিয়ার ভাবে কথা বলতে পারেন। সময় মত কাজ ডেলিভারি দিতে পাড়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।ফাইবারে আমাদের দেশের অনেক ভাই আছে যারা কাজ ঠিক মত না শিখে কাজ এর অর্ডার নিয়ে পরে সময় মত ডেলিভারি দিতে না পারায় প্রথম রিভিউ ই ১ স্টার বা ২ স্টার পায়। ফলাফল তার ফ্রিলান্সিং ধরতে গেলে সেখানেই শেষ! শুরুর আগেই শেষের যাত্রা।তাই আগে কাজ শিখুন।


আপনি কাজ পারলে মার্কেট প্লেস লাগবে না। নিজের পোর্টফলিও সাইটে আপনার যোগ্যতা তুলে ধরে একবার বড় কয়েকটা কাজ কমপ্লিট করতে পারলে তাদের রিকমেন্ড থেকে অনেকেই আসতে পারে।
এমন অনেক সিনিওর ভাই আছে যারা মার্কেট প্লেসে কাজ করে না, সরাসরি ক্লায়েন্ট থেকে কাজ বুঝে নেই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *