।•প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় খেলাফত পতনের পর ফিলিস্তিন সহ আরবের অধিকাংশ এলাকায় ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আর্থার জেমস বালফোর। উপনাম- ব্লাডি বালফোর। রক্তপিপাসু এই লোকটির জন্ম ২৫ জুলাই ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে।
যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ফন্দি এঁটেছেন। ব্রিটিশ বলে কথা! এদের কারণের ‘ব্রিটিশ’ শব্দটি গালিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেকথা থাক। ১৯৩০ সালের ১৯ মার্চ পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। ধুরন্ধর এই লোকটির দুনিয়া থেকে একেবারে চলে যাওয়ার খবরে শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো শুকরিয়া আদায় করে।.
কেন তাকে এতো ঘৃণা করত মুসলিম বিশ্ব? বিষফোঁড়া ইসরাইলের আশ্রয়দাতার প্রতি ঘৃণা থাকা ঈমানের অংশ।১৯১৭ সালে বালফোর ইহুদীদের কাছে একটি পত্র লেখেন, যে পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর প্রতিশ্রুতির কথা থাকে। ইহুদীরা তো আনন্দে বাকবাকম।
যাক, এতদিন পর একটি রাষ্ট্র পাচ্ছি। রাস্তায় রাস্তায় উদ্বাস্তু হয়ে আর থাকতে হবেনা। ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশে যেসব ইহুদীরা মুচলেকা দিয়ে থাকত তারাও এই খবরে বেজায় খুশি। গুনগুন করে বলতে থাকে, “বালফোর! কী দিয়ে যে তোমাকে ধন্যবাদ জানায়।” বিশ্বের সব ইহুদী তখন ফিলিস্তিনের পথ ধরে হাঁটে।
সেখানে পৌঁছে বসতি স্থাপন করা শুরু করে দেয়। একটা গানের কলি আছে না, “পররে মাটি পরের জায়গা ঘর বানাইয়া আমি রই” এমন আর কি!আপনাকে যদি একটি কালসাপ দিয়ে বলা হয়, ভাই! এটিকে পুষুন। পুষবেন? দুধকলা খাইয়ে সাপ পুষে কেউ? এই ইহুদীরা হচ্ছে এমন কালসাপ।
তৎকালীন বিশ্বে এদের কোন স্থান ছিলনা। কেউ জায়গা দিত না। হিটলার হাড়েহাড়ে চিনেছিল বিধায় আপদদের মাথা গুড়িয়ে দিয়েছিল।সারাবিশ্ব থেকে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে জড়ো হতে থাকে। একটা পরিসংখ্যানে চোখ রাখতে পারি। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়।
এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদীদের এই সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়।
.বিরক্ত হচ্ছেন? অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে লেখাটি? ভাইরে! কী করতাম বলেন! ওরা তো ইতিহাস ছোট রাখেনি। ঘটনার পর ঘটনা ঘটিয়ে ইতিহাস বড় করেছে। আমি ছোট করার কে? একটু সবর করে সামনে এগিয়ে যাই। চলুন!.হুট করে একটি দেশে এতো মানুষ জড়ো হয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে কিভাবে, এমন প্রশ্ন জাগেনা?
এখন হয়ত আপনি মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছেন, হ্যাঁ জাগে। তো জবাবটা দিয়েই ফেলি।ঐ যে ব্রিটিশ, মনে আছে তো? ১৯১৮ সালে ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ইহুদীরা একটা গুপ্ত বাহিনী গঠন করে। নাম হাগানাহ। এদের কাজ ছিল ঝগড়া বাঁধানো। অন্তর্দাহ সৃষ্টি করাই ছিল এদের মূল কাজ।
রাতের অন্ধকারে ফিলিস্তিনীদের বসতিতে আগুন ধরিয়ে দিত। খেতখামার নষ্ট করত। বাজারে বোমা ফোটাত। আতংক ছড়াত। এসব করত গোপনে গোপনে, যাতে কেউ টের না পায়। এদিকে ফিলিস্তিনীরা বিচার দেয়ার মত লোক পায়না। বাধ্য হয়ে তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে থাকল।
কতদিন এভাবে থাকবে? এই সুযোগে ইহুদীরা সেই পরিত্যক্ত জায়গা দখলে নিয়ে নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে লাগল। এই হলো ব্রিটিশদে কুবুদ্ধি। ওরা যে কতো খারাপ তা বলেকয়ে শেষ করা যাবেনা। .তৎকালীন বিচারকরাও এমনই ছিল। তারা ইহুদীদের পক্ষে ছিল। সামনাসামনি ফিলিস্তিনীদেরকে বলত, তোমাদের জমি নেয়ার সাধ্য কার? আড়ালে ইহুদীদের কানে কানে বলে বেড়াত, যা যা করার করে নে। বিচার তো আমরাই করব। বাহ!! কী কুবুদ্ধি। এই না হল ব্রিটিশ।
.ঝগড়া বাধিয়ে তারা একটি প্রহসনের বিচার করে। চলুন! জেনে নিই সেই বিচারের হাস্যকর রায়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়।
জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ড্যাভিড বেন গুরিয়ন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
- Nazrul Islam