রমজান মাসে আমাদের আমল, ফিলিস্তিনে হামলা ও মিডিয়ার মিথ্যাচার

 মক্কায় অদ্ভূত এক নারী ছিলো, যে সুতা পাকিয়ে সুন্দর সুন্দর কাপড়, টুপি, কম্বল ইত্যাদি তৈরি করতো। এরপর সে নিজেই সুতার দুই দিক থেকে টান দিয়ে এগুলোকে নষ্ট করে ফেলতো। এই নারীকে লোকজন পাগল মনে করতো, তার এমন কাজের জন্য।

সে এত পরিশ্রম করে পাকানো সুতাগুলোকে খামখেয়ালিপনায় টুকরো টুকরো করে ফেলতো।.ইমাম ইবনু কাসির (রা.) তাঁর ‘তাফসিরুল কুরআনিল আযিম’-এ বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনুল কারিমে এই নারীর উদাহরণ দিয়ে বলেন,

‘‘তোমরা ওই নারীর মতো হয়ো না, যে পরিশ্রমের পাকানো সুতো টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে।’’ [সুরা নাহল, আয়াত: ৯২].

আয়াত দ্বারা যদিও শপথ পাকাপাকি হওয়ার পর তা ভেঙে না ফেলতে বলা হয়েছে, তথাপি শায়খ আহমাদ মুসা জি’বরিল (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর ‘ধূলিমলিন উপহার: রামাদান’ বইতে এই ঘটনাটিকে সামনে এনে রোজাদারদের সতর্ক করেছেন। রোজাদারদের অনেকে সারা মাস রোজা রাখে, আমল করে, কিন্তু রামাদানের শেষ দিকে এসে হাল ছেড়ে দেয়; গুনাহে জড়িয়ে যায়; সারা মাসের সিয়ামসাধনাকে পণ্ড করে দেয়।

এটি খুবই বাস্তব একটি বিষয়। ব্যাপারটি এমন যে, কেউ ৩ ঘণ্টা ধরে পরীক্ষার খাতায় চমৎকার উত্তর লিখেছে। এরপর খাতাটি জমা না দিয়ে ছিঁড়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। .রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোনো আমল করে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে, সে যেন ওই আমলটি পূর্ণাঙ্গভাবে করে।’’ [বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৪৯৩০; তাবারানি, মু‘জামুল আওসাত্ব: ৮৯৭; আলবানি, সহিহুল জামি’: ১৮৮০; হাদিসটি সহিহ].

সুতরাং, রামাদানের এই শেষ লগ্নে এসে আমরা হাল ছাড়বো না, বরং সুন্দর ও যথার্থভাবে রামাদান শেষ করবো। দীর্ঘ এক মাসের সিয়ামসাধনা এবং ইবাদত-বন্দেগি ধরে রাখবো। .এরপর, রামাদান শেষে নতুন করে আবার অন্ধকারময় গুনাহের জীবনে ডুবে যাবো না। রামাদানের মতই সারা বছর গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো। বলা হয়, জীবন যদি কাটে রামাদানের মতো, তবে মৃত্যুও হবে এমন, যেন তা ঈদুল ফিতর!.

#Tasbeeh

মাসজিদুল আকসা এবং মুসল্লিদের ওপর যায়নিস্ট আগ্রাসনের ব্যাপারে পশ্চিমা মিডিয়ার একপেশে রিপোর্টিং নিয়ে এবার বেশ লেখালেখি হয়েছে। এই ঘটনাকে পশ্চিমা মিডিয়া বর্ণনা করেছে ‘clash’ বা ‘সংঘাত’ বলে। বিবিসি বাংলা-ও হুবহু একই শব্দে ‘সংঘাত’ বলে রিপোর্ট করেছে। অথচ বাস্তবতা হল সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটা সামরিক বাহিনী রমাদানের রাতে সালাত আদায় করার সময় নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা করেছে।

যায়নিস্ট বাহিনী টিয়ার গ্যাস, রাবার জ্যাকেট পরানো বুলেট, জল কামান আর স্টান গ্রেনেড নিয়ে মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মুসলিমরা খালি হাতে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাকে ‘সংঘাত’ নাম দিয়ে মিডিয়া এই আগ্রাসনের বৈধতা উৎপাদন করেছে। .

মিথ্যা মিডিয়ার কারসাজি এখানেই শেষ না। দশকের পর দশক ধরে ইহুদী সেটলাররা যায়নিস্ট রাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের তাঁদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করছে। কতো বেশ কিছু সপ্তাহ ধরে সেটলারদের উগ্রতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে এরা ফিলিস্তিনের আক্রমন করেছে।

তারপর রমাদান মাসে আল-আকসায় যায়নিস্ট বাহিনী হামলা করেছে। বুলেট এবং গ্রেনেড তারা ছুড়েছে। কিন্তু মিডিয়া এই সব কিছু বেমালুম চেপে গিয়ে আলোচনা শুরু করেছে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া থেকে। রিপোর্ট পড়লে মনে হবে মুসলিমরাই যেন আগ বাড়িয়ে পাথর ছুড়ে হামলা করেছে তারপর শান্তশিষ্ট যায়নিস্ট বাহিনী ‘বাধ্য হয়ে অ্যাকশনে’ গেছে।.এই ধরণের প্রোপাগ্যান্ডা শুধু ফিলিস্তিনের মুসলিমের বিরুদ্ধে চালানো হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা মিডিয়া এভাবে আগ্রাসনকে বৈধতা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমেনসহ মুসলিম বিশ্বে চালানো লিবারেল ক্রুসেইডকে গত ২০ বছর ধরে ঠিক একই স্ক্রিপ্টে মিডিয়া সমর্থন দিয়ে গেছে। এই একই ছকে মুসলিমদের আত্মরক্ষার প্রচেষ্টাকে সন্ত্রাস নাম দিয়ে ডিলেজিটিমাইয করেছে।

.এই স্ক্রিপ্ট পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও হুবহু কপি করা হয়েছে। ইন ফ্যাক্ট আমাদের মতো দেশগুলোর মিডিয়া আরও নির্লজ্জভাবে এই ধরনের প্রোপাগ্যান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। মাসজিদুল আকসার ঘটনাকে পশ্চিমা মিডিয়া তো কমসেকম দুই পক্ষের ‘সংঘাত’ বলেছে।

বাংলাদেশী মিথ্যে মিডিয়া হলে নিশ্চিত বলতো ‘পবিত্র রমজান মাসে মাসজিদুল আকসায় ফিলিস্তিনিদের তাণ্ডব! ৫ ইস্রাইলি পুলিশ আহত’!.সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টা হল অনেক মানুষ তখন সেটা বিশ্বাসও করতো। যেভাবে আমরা গতো ২০ বছর ধরে বিশ্বাস করে যাচ্ছি।- Asif Adnan

Scroll to Top