একটা সময় পরে আমাদের খরচ বাড়ে কিন্তু ইনকাম না থাকায় সব টাকা পরিবার থেকে চাইতেও লজ্জা লাগে। এমন অবস্থায় আমাদের উচিত ছাত্র জীবনে ইনকাম করা যায় এমন কিছু ব্যবসা বা স্বাধীন কিছু করা যাতে লেখাপড়াও চালিয়ে নেওয়া যায় সাথে সাথে কিছু টাকাও ইনকাম হয়।
আজকের পোস্টে জানানোর চেষ্টা করবো আপনি কিভাবে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় ছোট বা মাঝারি ব্যবসা করে কিংবা অনলাইনে কিছু করে টাকা আয় করতে পারেন তার কিছু উপায় ও সুবিধা অসুবিধা।
এই পোস্টে অনেক ধরনের ইনকাম উপায় পাবেন। কোনটা হালাল কোনটা হারাম তা নিজে যাচায় করে কাজে নামবেন প্লিজ। আমি বা আমার ব্লগ দায় মুক্ত। আমি শুধু উপায় গুলোর তথ্য জানাচ্ছি। ভালো মন্দ বিচার করে নামা আপনার দায়িত্ব।
ছাত্র অবস্থায় ব্যবসা করবেন নাকি অনলাইন কিছু? ছাত্র অবস্থায় ইনকাম টিপস ২০২৩
একটা কথা মাথায় রাখুন আপনি কোটিপতি বাবার দুলালি সন্তান না। সন্তান হলে এই পোস্ট আপনার জন্য না। আর সব হালাল কাজই উত্তম তা ছোট হোক কিংবা বড়। হালাক কাজকে ছোট করে দেখলে আপনি বড় হতে পারবেন না, হইতো লেখাপড়া শেষে ঘুষ দিয়ে একটা চাকরি নিয়ে আজীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু সফল একজন উদ্যোক্তা, একজন স্বাধীন বিজনেস ম্যান হতে পারবেন না। তাই ছোট থেকেই শুরু করতে হলে তাই ই ই ই করুন তাও কাজ করুন বসে না থেকে।
অনলাইন থেকে ইনকাম এর আগে কিছু সতর্কতা
অনলাইন থেকে আয় নিয়ে কিছু ভুল ধারনা আছে। সেগুলো নিয়ে কিছু না বলে আয় করার কথাতে যেতে চাচ্ছি না।
দেখুন আপনি ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস তেন পর্যন্ত পড়তে ১০ বছর সময় দিছেন। এই ১০ বছরের পড়া দিয়ে SSC সার্টিফিকেট দিয়ে আপনি কত টাকার চাকরি পাবেন আশা করেন?
১০ হাজার টাকার চাকরি পেতেও দম ছুটে যাবে। ঘুষ মামা ইত্যাদি লাগবে কিংবা ইট ভাঙ্গা লাগবে। এটা হল বাস্তবতা।
এখন আপনি যদি কিছু না শিখে কিংবা ২/৩ মাস ইন্টারনেটে বসে কিছু পোস্ট পড়ে কিংবা ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখেই মাসে কয়েক হাজার ডলার/ মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা ইনকাম করার কথা ভাবেন তাহলে আপনি বোকা মূর্খ এর মত ভাবছেন। তাই নইকি? আপনি নিজেই বলুন টাকা আয় করা যদি এত সহজ হত তাহলে মানুষ সারাদিন এত কষ্ট করে মাসে ২০ টাকার জব না করে বরং কিছু ভিডিও দেখে অনলাইন থেকে ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা কেনো করছে না?
সত্য হলো অনলাইন বা অফলাইন সব খানেই টাকা ইনকাম করা কঠিন কাজ।
অনলাইনে একটি সুবিধা হলো এখানে আপনার স্কিল থাকলেই আপনি কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। কোন সার্টিফিকেট কিংবা ঘুষ/ মামা লাগছে না। এটাই।
স্কিল ছাড়া কাজ নাই , কাজ ছাড়া টাকা নাই। তাই টাকা আয় করার চিন্তার আগে কাজ শিখুন। আর যারা সহজে ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা আয় এর কথা বলে তাদের এড়িয়ে চলুন। এরা প্রতারক। আমি যদি ঘরে বসে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারি তাহলে কেনো ৫ হাজার ১০ হাজার টাকার কোর্স করাতে যাবো? আমিই কেনো ঐ লাখ লাখ টাকা আয় করছি না? ভেবে দেখুন।
ছাত্র অবস্থায় ফ্রিলান্সিং করে ইনকাম
১. ব্লগ লিখে টাকা আয়
আপনি যদি লেখালেখিতে ভালো হোন তাহলে লেখালেখি করে টাকা আয় করতে পারেন। বাংলা ভাষায় লেখা ব্লগে ইনকাম কিছুটা কম কিন্তু তাও ছাত্র অবস্থায় খারাপ না। আর আপনি যদি ইংরেজিতে SEO ফ্রেন্ডলি ব্লগ লিখতে পারেন তাহলে ইনকাম বেশি হওয়ার চান্স বেশি। তবে আমি বলবো এডসেন্স না নিয়ে ডিরেক্ট কোন কম্পানির সাথে চুক্তি করে এড দেখিয়ে টাকা আয় করার চেষ্টা করা উচিত।
২. গ্রাফিক্স ডিজাইন
এখন প্রতিদিন অনলাইনে বেচা বিক্রি বাড়ছে, নতুন নতুন কোম্পানি অনলাইনে আসছে । এদের অনেকেই তাদের কম্পানির জন্য লোগো, বিজ্ঞাপন , পোস্টার ইত্যাদি কিনে থাকে। আপনি যদি ডিজাইনে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে একটি দিকে মাস্টার হতে পারলেও আশা করা যায় কাজ পেতে সমস্যা হবে না।
৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং বড় ব্যাপার কিন্তু একে ছোট আকারেও দেখা যায়। যেহেতু আপনি ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করার চেষ্টা করছেন তাই ছোট আকারের দিকে যাওয়া ভালো হবে। আর সেই ছোট দিক হলো অনলাইনে যারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট সেল করে তাদের সাথে কমিশন ভিত্তিতে চুক্তি করে তাদের হয়ে সেল করা। একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন হারাম কিছু প্রোডাক্ট ও অনলাইনে বেচা কেনা হয় এসব এড়িয়ে চলবেন। আর আপনি যদি মেয়ে হোন তাহলে ভুলেও নিজের চেহারা দেখিয়ে প্রোডাক্ট সেল করতে যাবেন না। এটা নিচু চরিত্রের স্বভাব।
আমি বুঝিনা একই ড্রেস এর বিজনেস একই খাবারের বিজনেস ছেলেরা চেহারা না দেখিয়েও দিনের পর দিন করতে পারে আর মেয়েদের ক্ষেত্রেই কেনো সেটা করতে গেলে মেয়েদের দেহ দেখাতে হবে?
বিরানি সেল করছে সেখানেও নারী দেহ, ড্রেস সেল সেখানেও নারীর দেহ। ছেলেরা বিজনেস করেনা নিজের দেহ বিক্রি না করে? ছেলেরা পারলে আপনারা মেয়েরা কেন পারবেন না? কেন নিজের শরীর বিক্রি করে বিজনেস করতে হবে?
৪। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার।
এখন ছোট থেকে বড় সব কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া তে নিজেদের অবস্থান রাখছে। সব কোম্পানি নিজেরা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলো মেন্টেন করে না। তারা অনেকে এর জন্য আলাদা করে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই দিকেও স্কিল বৃদ্ধি করে ট্রাই করতে পারেন।
৫। ভিডিও ক্রিয়েট ।
আপনাকে আমি শুধু ইউটিউব এর জন্য ভিডিও বানাতে বলছি না। এটা তো অনেকেই বলে। আপনি চাইলে ইউটিউব ভিত্তিক ভিডিও ছাড়াও ভিডিও দিয়ে আরো অনেক কিছু করতে পারেন। আপনি প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও বানিয়ে সেখানে আপনি এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করতে পারেন। সেই লিংক থেকে যত সেল হবে আপনি কমিশন ও তত পাবেন।
৬। কোর্স ।
আপনি ছাত্র কিন্তু আপনার নিজের একটা আলাদা গুন আছে যা অন্য সবার নেই। সেটা হতে পারে কোন ডিজাইন করা, কোন কিছু বানাতে পারা ইত্যাদি। আপনি সেই দক্ষতা কে অন্যদের শেখাতে কোর্স চালু করতে পারেন।
এখন আধুনিক যুগ আর ২০২০ সালের পর অনেকেই অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে জানে যারা আগেও জানতো না। তাই আপনি অনলাইনেই এই কোর্স করাতে পারেন।
আমি কিছুদিন আগে দেখলাম এক আপু যিনি বিদেশি রান্না করতে পারেন তিনি অন্য মেয়েদের কাছে অনলাইনে রান্নার কোর্স করাচ্ছেন।
আপনিও চাইলে এমন কিছু করতে পারেন। ( নিজের প্রাইভেসি, হালাল হারাম বিবেচনা করে করবেন প্লিজ)
অনলাইনে ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করা নিয়ে কিছু ধারনা দিলাম। এর বাইরেও অনেক অনেক কাজ আছে যা অনলাইনে করা পসিবল কিন্তু আপনি স্টুডেন্ট এবং কোন বড় অংকের টাকাও ইনভেস্ট করবেন না আবার ফুল টাইম সময়ও দিবেন না তাই যেগুলো তুলনামূলক সহজ সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে কথা বললাম।
এবার ছাত্র অবস্থাতে অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করার কিছু আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ছাত্র অবস্থায় ছোট ব্যবসা আইডিয়া ২০২৩
ব্যবসা করতে টাকা লাগবে, এখন আপনি কত টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার জন্য কেমন বিজনেস ঠিক হবে।
১। রিক্সা ভাড়া। যেমন ধরুন আপনি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা রিক্সা নামাতে পারেন। মাসে ২ হাজার টাকা করে পাবেন সেই রিক্সা ভাড়া দিয়ে।এক বছরে নতুন রিক্সা তেমন কোন সমস্যা হবে না আশা করি তাই মেইন্টেইনিং খরচ ও নাই। এক বছরে আপনার রিক্সার দাম উঠে যাবার কথা। ১২ * ২ = ২৪ হাজার টাকা।
এরপর যা আসবে তা আপনার প্রফিট এবং এই রিক্সা যদি ৫ বছর রানিং রাখেন তাহলে আপনি ২৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে প্রায় ১ লাখ টাকা প্রফিট পাচ্ছেন তাও প্যাসিভ ইনকাম আকারে অর্থাৎ আপনাকে কোন কাজ করতে হবে না শুধু কিনে কাউকে ভাড়া দিবেন।
২। মধু বিক্রি করে আয়
দিন দিন মধুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।অনলাইনে মধুর চাহিদাও বেশ ভালো দেখা যায়। অবশ্য বিক্রেতাও কম না। কিন্তু আপনি যদি ভালো মানের মধু সৎ থেকে ক্রেতার কাছে দিতে পারেন তাহলে একই ক্রেতা আপনার কাছে আবার ফিরে আসবে আশা করতে পারেন। আর রিটার্ন ক্রেতা মানে ব্যবসা সফল।
৩। পুরাতন মোবাইল বিক্রি ব্যবসা
এটা অনেকেই করে থাকে। বিজনেস করতে না করলেও টুকটাক টাকা কামানোর জন্য হলেও করে। আপনিও চাইলে একটু সিরিয়াস ভাবে এই কাজ করতে পারেন। মোবাইল বিক্রির আগে ক্রেতা কে সেটের ভালো মন্দ সব জানিয়ে সেল করুন যাতে ক্রেতার ট্রাস্ট অর্জন করতে পারেন কেননা আপনি কারো ট্রাস্ট অর্জন করতে পারলে সে নিজে আবাএ আসবে সাথে তার কোন ফ্রেন্ড ও যদি পুরাতন সেট কিনতে চাই তাহলে সে তাকেও নিয়ে আসবে আপনার কাছে।
৪। পুরাতন বই সেল বিজনেস
এটা সারাবছর একই ভাবে কাজ করবে না তবে সিজন শুরুর আগেই যদি প্ল্যান করে নেমে জেতে পারেন তাহলে ভালো ইনকামের সুযোগ পেতে পারেন। বিশেষ করে অনার্স লেভেলের স্টুডেন্টদের টার্গেট করে কাজ করলে ক্রেতা পাওয়া সহজ হওয়ার কথা।
৫। ছাত্র অবস্থায় ফাস্ট ফুড বিজনেস
আপনি নিজে করতে পারেন কিংবা কাউকে দিয়ে করাতে পারেন। তবে ভালো হবে যদি আপনি নিজেই করেন। মানুষ আর কিছু কিনুক না কিনুক খাবার কিনেই। আর রাস্তা ঘাটে তো ফাস্ট ফুড এখন ভালোই চলে। লোকেশন ঠিক মত সিলেক্ট করতে পারলে ছোট থেকে বড় হতে বেশি সময় লাগার কথা না।
৬। টি শার্ট বিজনেসপুরা সেটাপ আপনি নিজে করলে খরচ একটু বেড়ে যাবে তবে শুরু করতে পারলে লাভ পাবেন আশা করি। কারন টি শার্ট তৈরিতে খরচ কম হলেও দাম ভালই পাওয়া যায়।
উপসংহারঃবিজনেস করেন কিংবা জব। ছাত্র অবস্থাতে কিংবা ফুল টাইম কেরিয়ারে। আপনাকে সফল হতে কষ্ট করতে হবে, নিজেকে প্রেসার দিতে হবে, সৎ থাকা চাই আর তাকওয়া ও Tawakkul.
1 thought on “ছাত্র অবস্থায় ইনকাম – ব্যবসা ও অন্যান্য উপায় এর লিস্ট”