স্যাটেলাইট মানে কি কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ ও কাজ সমূহ

 স্যাটেলাইট মানে কি কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ ও কাজ সমূহ   

অনেক জায়গায় দেখবেন বা শুনতে পাবেন “এখন স্যাটেলাইট  এর যুগ ” কিন্তু এই স্যাটেলাইট কি জিনিস স্যাটেলাইট কাকে বলে এর সংজ্ঞা কিংবা কাজ কি আমরা মন দিয়ে কখনো জানতে চেয়েছি?আপনি চেয়েছেন বিধায় এই পোস্টে ক্লিক করে আসছেন।

আমরা আজকে জানার চেষ্টা করবো 

  1. স্যাটেলাইট শব্দের মানে কি
  2. স্যাটেলাইট  কাকে বলে
  3. স্যাটেলাইট কি কাজে লাগে
  4. স্যাটেলাইট  কত প্রকার ও কি কি
  5. বাংলাদেশের স্যাটেলাইট  বঙ্গবন্ধু ১ নিয়ে কিছু তথ্য 
  6. ও Satellite এর ছবি পিকচার ডাউনলোড
স্যাটেলাইট  কাকে বলে

 স্যাটেলাইট  কি বা কাকে বলে?

স্যাটেলাইট  যাকে কিনা কৃত্রিম উপগ্রহও বলা হয়ে থাকে তা হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। মানুষের তৈরি এসব উপগ্রহ পৃথিবী কে কেন্দ্র করে নিজ নিজ গতিতে ঘূর্ণায়মান। মানুষ তৈরি করে বলে একে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট  বলে।  স্যাটেলাইট বলতে কি বুঝায় জানতে চাইলে এটাই সহজ উত্তর।

স্যাটেলাইট  কিভাবে কাজ করে ?

কিভাবে স্যাটেলাইট  কাজ করে তার অনেক গুলো উত্তর আছে কেননা স্যাটেলাইট  নিজে কিভাবে চলে নিয়ন্ত্রন করে তা এক জিনিস আবার কোন স্যাটেলাইট  কোন ধরনের তার উপর নির্ভর করে সেই উপগ্রহের কাজের ধরন ও পালতে যায়।
প্রথমে দেখি স্যাটেলাইট  কিভাবে মহাকাশে যায়, এর জ্বালানী কি এসব।যারা মহাকাশ নিয়ে সামান্য জানে তারাও জানে স্যাটেলাইট  কে রকেটে করে মহাকাশে পাঠানো হয় এবং মহাকাশে নিজ কক্ষে যাওয়ার পর একে ছেড়ে দেওয়া হয়। 
অনেক রকেটে কিছু সময়ের জন্য বা কাজের জন্য আলাদা জ্বালানী দেওয়া হয়ে থাকলেও বেশিরভাগ স্যাটেলাইট  চলে সোলার পাওয়ারে। ভালো করে  লক্ষ করলে দেখবেন স্যাটেলাইট  এর দুই পাশে পাখির ডানার মত লম্বা ডানা থাকে, আসলে সেখানে সোলার প্যানেল লাগানো থাকে। মহাকাশে ঘুরার সময়ে এসব সোলার প্যানেল সূর্য থেকে কারেন্ট তৈরি করে আর সেই কারেন্ট বা পাওয়ার দিয়েই স্যাটেলাইট  নিজের প্রোগ্রাম চালু রাখে। অর্থাৎ সিগন্যাল সেন্ড করা রিসিভ করা, ডাটা পরিক্ষা নিরিক্ষা করা কিংবা অন্য কোন কাজ।

স্যাটেলাইট  কত প্রকার ও কি কি ? 

কাজের ধরন অনুযায়ী স্যাটেলাইট    বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যেমন ঃ

  1. যোগাযোগ স্যাটেলাইট   
  2. মিলিটারি স্যাটেলাইট   
  3. রিসার্চ স্যাটেলাইট   
  4. আবহাওয়া স্যাটেলাইট। ইত্যাদি

যোগাযোগ স্যাটেলাইট  এর কাজ ঃনাম দেখেই বুঝতে পারছেন মূলত যোগাযোগ এর জন্য এই ধরনের স্যাটেলাইট    ইউজ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট    হলো একটি যোগাযোগ উপগ্রহ।
মিলিটারি স্যাটেলাইট   ঃবিভিন্ন শক্তিশালী দেশ যেমন আমেরিকা রাশিয়া চীন তাদের মিলিটারির কাজের জন্য, নিরাপদ যোগাযোগ এর জন্য ও শত্রুর চলাচল পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির জন্য মিলিটারি স্যাটেলাইট    ইউজ করে থাকে। এই ধরনের স্যাটেলাইট  দাম ও কাজ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে ফলে সব দেশ এমন স্যাটেলাইট    ইউজের সুবিধা পায় না। 
রিসার্চ স্যাটেলাইট   ঃ পৃথিবী, পৃথিবীর বাইরের বিভিন্ন বস্তুর ধাতুর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করার জন্য রিসার্চ স্যাটেলাইট   ব্যবহার হয়ে থাকে।
আবহাওয়া স্যাটেলাইটঃ আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য এগুল ইউজ হয়।  

স্যাটেলাইট রকেট ছবি

কেন্দ্র থেকে কক্ষ পথের দূরত্ব অনুযায়ী স্যাটেলাইট   চার প্রকার ।

  1. Geostationary Earth Orbit
  2. LEO (Low Earth Orbit)
  3. MEO (Medium Earth Orbit) or ICO (Intermediate Circular Orbit)
  4. HEO (Highly Elliptical Orbit)

স্যাটেলাইটের কাজ কি

Geostationary Earth OrbitGeostationary স্যাটেলাইট   পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে এবং এই স্যাটেলাইট  পৃথিবীর সমান গতিতে ঘূর্ণায়মান থাকে ফলে আপাত ভাবে স্যাটেলাইটটি একই স্থানে স্থির থাকে। টিভি চ্যানেল, রেডিও, আবহাওয়া ইত্যাদির স্যাটেলাইট   গুলো মূলত এই শ্রেণীর ই।
এই ধরনের স্যাটেলাইট  এর কিছু সুবিধা ঃ

  • একই স্থানে থাকে বিধায় রিসিভার বা সেন্ডার এন্টেনা বার বার ঠিক করা লাগে না।
  • মাত্র ৩ টি জিইও স্যাটেলাইট   ই এনাফ পুরো পৃথিবী কে কভার করার জন্য 
  • জিইও স্যাটেলাইট   টিভি চ্যানেল ও রেডিও এর জন্য বেস্ট 

অসুবিধা সমূহঃ

  • উত্তর ও দক্ষিন মেরুতে সিগন্যাল পেতে সমস্যা করে।
  • শহরে অধিক বিল্ডিং এর ফলে সিগন্যাল পেতে সমস্যা
  • ব্যয়বহুল
স্যাটেলাইট এন্টেনা পিক

LEO (Low Earth Orbit)

লো অরবিট স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবী থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে।এই ধরনের স্যাটেলাইট জিইও এর মত একই স্থানে অবস্থান করে না।
LEO স্যাটেলাইট এর সুবিধাঃ

  • এর ট্রান্সমিশন রেট প্রতি সেকেন্ডে ২৪০০ বিট ফলে এটি ভয়েস কমুনিকেশন এর জন্য উত্তম।
  • যেহেতু লিইও স্যাটেলাইট কম জায়গা জুড়ে ঘুরে সেহেতু এটি কম Bandwidth নষ্ট করে ।
  • এর টাইম ডিলে কম

অসুবিধা সমূহঃ

  • এই ধরনের স্যাটেলাইট এর লাইফটাইম কম। যেহেতু নিকটে অবস্থান করে ফলে এর ফ্রিকশন ও বেশি হয়। এতে করে স্যাটেলাইট এর জীবন কাল মাত্র ৫ – ৮ বছর পর্যন্ত হয়।
  • পুরা পৃথিবীকে কভার করতে অনেক গুলো এমন স্যাটেলাইট লাগবে। বেশি স্যাটেলাইট এর ফলে জটিলতা বাড়বে।

MEO (Medium Earth Orbit) or ICO (Intermediate Circular Orbit)MEO স্যাটেলাইট জিইও এবং লিইও এর সীমার মাঝামাঝি কোন এক জায়গায় অবস্থা করতে পারে। এটি সার্ফেস থেকে ৬ হাজার থেকে ২০ হাজার কিমি দূরত্ব এর মাঝে যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে।এই ধরনের উপগ্রহের কাজ লিইও এর মতই বলা চলে। যদিও এর কভার রেঞ্জ লিইও এর চেয়ে বেশি।

MEO স্যাটেলাইট সুবিধা

  • প্রায় 10,000 কিলোমিটার কক্ষপথ ব্যবহার করে, সিস্টেমে কেবলমাত্র এক ডজন উপগ্রহ প্রয়োজন যা জিও সিস্টেমের চেয়ে বেশি, তবে এলইও সিস্টেমের চেয়ে অনেক কম।
  • এই উপগ্রহগুলি একটি সহজ সিস্টেম ডিজাইন (উপগ্রহের পিরিয়ডগুলি প্রায় ছয় ঘন্টা সময় দেয়) হিসাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনের তুলনায় আরও ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
  • প্রবণতার উপর নির্ভর করে একটি এমইও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কভার করতে পারে, যাতে কম হ্যান্ডওভারের প্রয়োজন হয়। অসুবিধাগুলি পৃথিবীর বৃহত্তর দূরত্বের কারণে, বিলম্ব প্রায় 70-80 এমএসে বৃদ্ধি পায়।
  • উপগ্রহগুলির জন্য ছোট পদক্ষেপের জন্য উচ্চতর সংক্রমণ শক্তি এবং বিশেষ অ্যান্টেনার প্রয়োজন।
  • এমইও স্যাটেলাইটের দূরত্ব এটি দীর্ঘ সময় বিলম্ব এবং এলইও স্যাটেলাইটের চেয়ে দুর্বল সংকেত দেয়।

স্যাটেলাইট নিয়ে আরো কিছু

কথা১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-১ নামে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-২ নামে আরেকটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে যাতে ছিল লাইকা নামে একটি কুকুর।১৯৫৮ সালের ১-লা জানুয়ারি আমেরিকা প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এক্সপ্লোরার-১ নামে।একটি স্যাটেলাইট কে কক্ষপথে তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ দরকার। এটি হচ্ছে ২৮,২০০ কিমি/ ঘন্টা ।২০০৯ সালে একটি আমেরিকান এবং একটি রাশিয়ান স্যাটেলাইট এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।স্যাটেলাইট খুব ছোট ও হতে পারে। যেমন ১০ সেন্টিমিটার সাইজ এর।স্যাটেলাইট কে মিসাইল এর মাধ্যমে ধ্বংস করাও যেতে পারে।


মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যাঃ

১৯৫৭ সালে প্রথম মহাকাশে স্পুটনিক-১ নামে স্যাটেলাইট প্রেরণ করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। এরপর অনেক দেশ তাদের অনুসরণ করে মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে। বর্তমানে কক্ষপথে দু্ই হাজার দুইশোটির বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে।স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও এর গতিবিধি নিয়ে কাজ করে এন২ওয়াইও.কম ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া ভূক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত স্যাটেলাইট সংখ্যা ১৫০৪টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৬১৬টি, চীনের ২৯৮টি, জাপানের ১৭২টি, ফ্রান্সের ৬৮টি, ভারতের ৮৮টি, তুরস্কের ১৪টি, পাকিস্তানের ৩টি, সৌদি আরবের ১৩টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৪টি, স্পেনের ২৩টি, ব্রিটেনের ৪২টি। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনেকগুলো স্যাটেলাইট বর্তমানে কক্ষপথে অবস্থান করছে।

1 thought on “স্যাটেলাইট মানে কি কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ ও কাজ সমূহ”

Leave a Comment