পৃথিবীর অন্য দেশ গুলোর মত বাংলাদেশেও বেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। গোয়েন্দার কাজ অনেক পুরাতন। গুপ্তচরবৃত্তি করা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি পেশা হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। একটি রাষ্ট্র কে স্বাধীন হিসাবে টিকে থাকতে, বন্ধু এবং শত্রুর উপর নজর রাখতে, দেশের অভ্যন্তরের বিষয়ে নজরদারি করতে গোয়েন্দা বাহিনির প্রয়োজন পড়ে।
বাংলাদেশের মোট গোয়েন্দা সংস্থা আছে ১৪ টি। এর মধ্যে DGFI, NSI, DB,CID অন্যতম। আমি এই পোস্টে বাংলাদেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থা বাহিনি গুলোর নাম, তাদের কাজের ধরন, ইত্যাদি বিষয় আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।
বাংলাদেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার নামের তালিকা
এই পর্বে আমি বাংলাদেশের মোটামোটি সকল গোয়েন্দা বাহিনির নাম ও তাদের নিয়ে টুকিটাকি তথ্য তুলে ধরবো। বাংলাদেশের পুলিশে সবচেয়ে বেশি গোয়েন্দা বিভাগ বিদ্যমান। এদের নিয়ে মাঝের দিকে লেখা পাবেন।
- বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা
- জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর
- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা
- বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম
- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা
- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার নাম কি
- গোয়েন্দা বিভাগে কোন রশ্মি ব্যবহৃত হয়
Directorate General of Forces Intelligence (DGFI)
DGFI ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে, তখন এর নাম ছিলো ভিন্ন। পরবর্তীতে মেজর জিয়া DGFI নাম করন করেন এবং DGFI এর সাংগঠনিক পরিবর্তন আনেন। অনেকের মতে DGFI পাকিস্তানের ISI কে ফলো করে বানানো হয়েছে।
ডিজিএফআই মূলত সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ যার প্রধান দায়িত্ব হলো সামরিক গোপন তথ্য, ষড়যন্ত্র, অন্য দেশের সামরিক বাহিনির তথ্য, শত্রু রাষ্ট্রের গোয়েন্দা থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনিকে নিরাপদ রাখা এবং মিলিটারিতে চাকরী করা সদস্যদের উপর নজরদারি করা।
কোন সৈনিক বা অফিসার কোথাও কোন ভুল করছে কিনা, আইন অমান্য করছে কিনা এসবের উপরে নজর রাখে DGFI
তবে অফিসিয়াল এসব দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও DGFI এখন বাংলাদেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার ভুমিকাও পালন করছে।
এই সংস্থার উপরে গুম খুনের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। বিভিন্ন পলিটিক্যাল নেতাদের উপর নজরদারির জন্যও কখনো কখনো ডিজিএফআই সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর প্রধান হিসাবে একজন ২ স্টার মেজর জেনারেল দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে আরো কয়েকজন উপ মহাপরিচালক থাকেন।
DGFI সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট প্রদান করে থাকে।
National Security Intelligence (NSI) জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর
DGFI যেহেতু সামরিক গোয়েন্দা শাখা সেহেতু বেসামরিক ভাবে বাংলাদেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আসলে National Security Intelligence বা NSI
এই বাহিনির প্রধান হিসাবেও একজন মেজর জেনারেল দায়িত্ব পালন করলেও নিচের সারির পরিচালক, উপ পরিচালক এদেরকেও বেসামরিক ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
এই সংস্থাটি অনেকটা আমেরিকার FBI এর মত। এদের প্রধান কাজ দেশের ভিতরে নজর রাখা। যদিও বিদেশেও NSI কাজ করে থাকে তবে বাংলাদেশের হয়ে বিদেশে গোয়েন্দা কাজ চালানোর জন্য মেইন দায়িত্ব পালন করে DGFI
National Security Intelligence বা NSI এর প্রধান কার্যালয় সেগুনবাগিচায় এবং NSI সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট প্রদান করে থাকে।
Special Branch (SB)
বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম একটি গোয়েন্দা বিভাগ হলো স্পেশাল ব্রান্স বা এসবি। এর প্রধান কার্যালয় মালিবাগ, ঢাকাতে। এসবির প্রধান একজন মেজর জেনারেল সমমর্যাদার পুলিশ পফিসার। মূলত নানা রকম তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা এই বাহিনির কাজ।
Detective Branch (DB)
ডিবির নাম শুনেনি এমন মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া কঠিন। নানা রকম অপরাধের সাথে মাঝে মধ্যেই ডিবির নাম চলে আসে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প এরিয়া থেকে চাদার টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় আর্মির কাছে আটক ডিবি,
ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে খুন
ইত্যাদি নিউজ মাঝে মধ্যেই হেড লাইন হয় আমাদের দেশে। এদিক থেকে এই বাহিনি কে কিছুটা নেগেটিভ ভাবেই দেখে অনেকে।
যদিও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সমাধান করেছে ডিবি।
ডিবি কবে যাত্রা শুরু করে এসব নিয়ে তেমন একটা তথ্য পেলাম না উইকিতে তাই আপাতত বেশি কিছু জানাতে পারছি না।
Police Bureau of Investigation (PBI)
পুলিশের নতুন একটি গোয়েন্দা বিভাগ পিবিআই। ফরেনসিক পরিক্ষা নিরিক্ষা করা, হত্যার ক্লু খুজে বের করা ইত্যাদি কাজের দায়িত্ব পালন করে থাকে এই বাহিনি।
পিবিআই ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করেছে। একদম নতুন বলা চলে এই বাহিনিকে।
Criminal Investigation Department (CID)
পুলিশের সিআইডি এই নামের সাথে অনেকেই পরিচিত। অনেক মামলার বিশেষ করে খুনের মামলা তদন্ত করতে এই বাহিনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
১৯৭১ সাল থেকে সিআইডি কাজ শুরু করে। এই বাহিনির লোকেরা সিভিল ড্রেসেই দায়িত্ব পালন করে থাকে।
Counter Terrorism and Transnational Crime (CTTC)
২০১৬ সালে ৬০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে CTTC পথ চলা শুরু করে। টেরোরিজম রিলেটেড বিভিন্ন অপারেশন এই বাহিনির মূল দায়িত্ব।
বাংলাদেশ পুলিশের সোয়াত টিম CTTC এর অধীনে কাজ করে থাকে।
Counter Terrorism and Intelligence Bureau (CTIB)
২০০৬ সালে এই বাহিনি গঠন করা হয়েছে। এটি ডিজিএফআই এর অধীনে দায়িত্ব পালন করে এবং ডিজিএফআই ও আমেরিকার সিআইএ অধীনে ট্রেনিং নিয়ে থাকে।
National Telecommunication Monitoring Centre (NTMC)
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার আধুনিক গোয়েন্দা বিভাগ। ফোনে আড়িপাতা, ইন্টারনেট ইউজারদের উপর নজরদারি করা National Telecommunication Monitoring Centre (NTMC) মূল দায়িত্ব। ২০১৭ সালে ২ বিলিয়নের বেশি টাকা দিয়ে এই বাহিনির জন্য নানা রকম ইন্সট্রুমেন্ট কেনা হয়েছে নজরদারি করার জন্য।
একজন মেজর জেনারেল এই বাহিনির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে।
Central Intelligence Unit (CIU)
উইকিপিডিয়ায় এই সংস্থার নাম থাকলেও গুগল করেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU)
অর্থ লেনদেন, পাচার ইত্যাদি কাজের উপর নজরদারি চালাতে বাংলাদেশে Financial Intelligence Unit (BFIU) বিদ্যমান। সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, মানি লন্ডারিং উপর তথ্য কালেক্ট করা ইত্যাদি কাজের জন্য এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
২০০২ সালে যাত্রা শুরু করা এই সংস্থা ২০১২ সালে এসে নাম পরিবর্তন করে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে কাজ করে থাকে।
Special Security Force – Intelligence Bureau (SSF-IB)
বাংলাদেশের এলিট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান করে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা এবং দেশে ভিজিট করতে আসা বিদেশি দূতদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে SSF.
ওসি প্রদিপ যে মেজর সিনহাকে হত্যা করেছিলো সেই মেজর সিনহা এই এসএসএফ এর একজন সদস্য ছিলো।
বিভিন্ন বাহিনি থেকে চৌকশ এবং রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বস্ত লোকদেরকেই এই বাহিনিতে আনা হয়। ( লীগ কখনো বিএনপি ঘেরা কাউকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দিবে না আবার বিএনপিও কখনো কোন লীগ ঘেরা ব্যক্তিকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্ব দিবে না। এটাই “রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বস্ত” কথার অর্থ।
এসএসএফ এর প্রধান একজন মেজর জেনারেল আর্মি অফিসার।
Rapid Action Battalion – Intelligence Wing (RAB-IW)
এটি র্যাব এর গোয়েন্দা বিভাগ। পুলিশের মত র্যাবেও আলাদা করে ইন্টেলিজেন্স বিগাভ আছে। এরা বিভিন্ন ইন্টেল কালেক্ট করে র্যাবের কাজে সাহায্য করে থাকে।
যত টুকু জানি এই বিভাগে আলাদা করে লোক নিয়োগ নেওয়া হয় না বরং র্যাব এর নিজস্ব লোকদের দিয়েই এই সংস্থা পরিচালিত হয়।
Directorate of Air Intelligence (DAI)
DAI মূলত বিমান বিহিনির গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের আকাশ ব্যবস্থার উপর নজর রাখা, বিমান বাহিনির সদস্যদের উপর নজর রাখা ইত্যাদি কাজে এই বাহিনি নিয়োজিত।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কয়টি
বাংলাদেশে বিভিন্ন বাহিনির গোয়েন্দা বিভাগ মিলিয়ে মোট ১২টি গোয়েন্দা সংস্থা করে থাকে। এর মধ্যে DGFI, NSI, DB, CID অন্যতম।
বাংলাদেশের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা
বাংলাদেশের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে শুরুতে DGFI এর নামই আগে আসবে। কেননা এই বাহিনির কাজের পরিধি, ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা অন্য বাহিনি গুলো থেকে বেশ বেশি।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ২টি গোয়েন্দা বাহিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। DGFI, NSI পিএম কাছে জবাবদিহি করে থাকে।
গোয়েন্দা বিভাগে নিয়োগ সব গোয়েন্দা বিভাগে আলাদা করে নিয়োগ দেওয়া হয় না। বরং এক্সিস্টিং কর্মরত লোকদের দিয়েই গোয়েন্দা বাহিনির কাজ পরিচালিত করা হয়ে থাকে।তবে NSI তে সিভিল ভাবে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা নাম উপরে সকল গোয়েন্দা সংস্থার নামের তালিকা দেওয়া হয়ে গেছে।
বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাপৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার নাম ও অন্যান্য তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়তে পারেনঃ