এখন মোবাইল আর ব্রডব্যান্ড নেট সহজ হওয়ায় নেটে ক্রেতা আর বিক্রেতা উভয়ই বেড়েছে।চারিদিকে উদ্যোক্তা! বিবিএ পড়ে সে উদ্যোক্তা সিএসই পড়ে সেও পোশাক বিক্রি করে উদ্যোক্তা হতে চাই। এটা খারাপ না, এটা বরং ভালো। কিন্তু অনেকেই কোন জানাশুনা ছাড়া জাস্ট ফেসবুক এর গ্রুপে গ্রুপে সেল পোস্ট দেওয়াকেই অনলাইন বিজনেস মনে করেন! কিন্তু এর ফল হয় খারাপ। কেননা এত এত গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আপু ইনবক্স আপু ইনবক্স করে যা প্রফিট থাকে তা পরিশ্রম এর তুলনা কম । এতে অনেকে হাল ছেড়ে দেন। আজকের পোস্টে আমি দেখাবো কিভাবে সহজে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন তাও কম কাজ করে।
- অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায়
- নেটে ছোট বিজনেস এর টিপস
- পণ্য বিক্রি করার উপায়
- ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
ক্রেতা যাচায়ঃ
আমি হালিম খেতে চাই আর আপনি আমার কাছে ঘরোয়া সবজি বিক্রি করতে চাইলে আমি কেনো কিনবো? আবার যে কফি খেয়ে অভ্যস্ত তার কাছে চায়ের কথা বলে লাভ কি?আপনি যদি আপনার প্রডাক্ট বিক্রি করতে চান তাহলে সেই প্রডাক্ট এর আসল ক্রেতা খুজে বের করতে হবে, ক্রেতারা আগে চাইতো এখন কি চাই তাদের মনের পরিবর্তন গুলোর দিকে নজর দিন। আপনার পণ্য কে তাদের জন্যই করুন। আপনি যখন আপনার ক্রেতা কে ভালো সার্ভিস দিবেন তখন সেই ক্রেতায় আপনার বিজনেস সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনাকে লাভের চিন্তা করতে হবে না।
লক্ষ করুন কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে হটাত করে ফেসবুক এ ইচ্ছামত নতুন নতুন ইলেক্ট্রিক এর ডিভাইস এর এড আসছিলো। F commerce বলতে গেলে তখন ছোট ফ্যান ইউএসবি লাইট ব্লা ব্লা এসবের দখলে। কিন্তু তারা আজকে নাই!! কেনো?তখন এতো এতো উদ্যোক্তা যারা নতুন নতুন ডিভাইস এনে মার্কেটে চালু করতে চাইলো তারা আজ মার্কেটে নাই কেনো?
কারন তারা বাংলাদেশে এমন কিছু চালু করতে চাইছিলো যা বাংলাদেশে চলবে না। বাংলাদেশের আমরা শখ করে ১২০০ টাকা দিয়ে শসা কাটার মেশিন কিনবো না!!!৫০০ টাকা দিয়ে ছোট খেলনা ফ্যান কেনার মত আহ্লাদী আমরা না।
এজন্যই কিন্তু সেই সময়ের অনেক পেজ অনেক বিক্রেতা আজ আর নেই। ক্রেতা যাচায় না করেই পণ্য নিয়ে চলে আসলাম তাহলে তো হবে না।
- অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায়
আগে সেবা পরে লাভঃ
আপনি যদি ছোট উদ্যোক্তা হোন আর শুরুতেই লাভের চিন্তা করেন তাহলে আপনার ক্রেতারা আপনার থেকে দূরে চলে যাবে। আপনি যদি অনলাইন বিজনেসে লং টার্ম থাকার চিন্তা করেন তাহলে অবশ্যয় আপনাকে প্রথমে ভালো সেবা দিতে হবে পরে লাভের চিন্তা।একবার যদি আপনি ভালো পরিমান ক্রেতার মন জয় করতে পারেন তাহলে সেই ক্রেতারা বারবার ফিরে আসবে নতুন নতুন ক্রেতা সহ আসবে!!
আপনাকে মাথায় রাখতে হবে অনালিন থেকে আমরা তখন ই প্রডাক্ট কিনবো যখন বিক্রেতা আমাদের বিশ্বাস এর জায়গা পাবে। বাংলাদেশে অনলাইন কেনা কাটা এখনো জনপ্রিয় না। তার উপরে বড় বড় কোম্পানি গুলোও ক্রেতাদের সাথে ২ নাম্বারি করে, পণ্য ডেলিভারি তে দেরি করে এসবের ফলে মানুষ অনলাইন থেকে কেনার আগে অফলাইন দেখে!! আপনাকে দেখাতে হবে আপনার পণ্য ক্রেতার মন মত এবং সময় মত ডেলিভারি দিতে সক্ষম।
অনলাইন বিজনেসে আবেগঃ
প্রডাক্ট এর সাথে যদি আবেগ মিশাতে পারেন তাহলে আপনার ক্রেতার মনে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বিক্রি করাও সহজ হবে। কিভাবে আবেগ মিশ্রিত করবেন আমি জানিনা! আপনি আপনার পণ্য এর সাথে মানানসই কোন আবেগ মিশানোর চেষ্টা করতে পারেন। ঐ যে বাংলাদেশের একটা বিশেষ সিম কোম্পানি ইমোশনাল এড দিয়ে দিয়ে মানুষের কাছে পৌছায় এবং তারা কিন্তু বাংলাদেশের ১ নাম্বার সিম কোম্পানি!!!অনলাইনে বিজনেস করতে গেলে আবেগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
ওয়েব সাইট দিয়ে টাকা ইনকাম ঃ
আপনি যদি অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে শুধু ফেসবুক পেজ গ্রুপের উপর নির্ভর করা বোকামি হবে। আপনার উচিত ভালো মানের একটা সাইট করা। এখন সাইট করা কঠিন কিছু না। আপনিই পারবেন। আপনার কাজ হবে সেই সাইটে আপনার প্রডাক্ট এর রিভিউ লেখা। অনেস্ট রিভিউ লিখবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ইনকাম ফেসবুক ছাড়াও আরো অনেক সোশ্যাল মিডিয়া আছে। আপনার টার্গেট ক্রেতা কোন সাইটে বেশি সময় দেয় সেটা বের করুন। সব খানে আপনার সাথে কন্টাক্ট করার সহজতা রাখুন।
প্রোডাক্ট ডেলিভারি টাইম ঃ
আপনার ব্যাবহার আপনার পণ্য যত ভালো হোক আপনি যদি ক্রেতার সময় মত পণ্য তার কাছে দিতে পারেন তা হলে আপনার বিজনেস এর স্বপ্ন নিয়ে আবার ভাবা দরকার।১০ তারিখ আমার বন্ধুর বিয়ে আমার একটা পোশাক দরকার আর আপনি আমাকে সেই পোশাক যদি ১১ তারিখ দেন তাইলে সেই পোশাক অনেক ভালো হলেও আপনি ক্রেতার ক্ষোভের মুখে পরবেন। ঐ ক্রেতা আপনার কাছে আবার আসতে ভাববে।তাই ডেলিভারি সময়ের দিকে বিশেষ নজর দিন।
উপহার ঃ
আপনার পণ্য এর সাথে জড়িত এবং অনলাইনে জনপ্রিয় এমন মানুষদের কাছে আপনার পণ্য টি উপহার পাঠান। তবে দেইখেন সোশ্যাল মিডিয়ায় নাভি বগল দেখানো সস্তা নারীদের কাছে আপনার পণ্য পাঠিয়ে আপনার বিজনেসে লাভ করতে পারবেন না।কারন কি? কারন তথাকথিত ঐ সব নারীরা যারা কিছু পারেনা নিজের দেহ দেখানো ছাড়া তাদের ফলোয়ার সব ছ্যাঁচড়া পোলাপাইন। আপনি যদি তাদের কাছে ক্রিমের স্পন্সর করেন তাইলে আপনার ক্রিম চুলের সেল হবে!! সস্তা নারী দেখে বেড়ানো ছেলেদের কিসের দরকার সেই ক্রিম? সুতরাং বুঝে শুনে ৫ জন কে উপহার দিন দেখবেন ফাউল ৫০ জন কে উপহার দেওয়ার চেয়ে বেশি লাভ হবে।
ধরুন আসিফ আদনান ভাই ইসলাম নিয়ে ভিন্ন ধর্মী লেখা লেখি করে আপনি যদি বই বিক্রির সাথে থাকেন তাহলে Asif Adnan, Rafan Ahmed, Arif Azad এদের কয়েকজন কে উপহার দিয়ে আপনার বই এর রিভিউ আনতে পারলেই আশা করা যায় আপনার বিক্রি ডাবল হতে সময় লাগবে না।
মধু, মেসওয়াক, এসবের জন্যও তারা কার্যকর। কিন্তু এদের কাছে যদি আপনি টাইট ফিটিং বোরকা দেন তাইলে হবে কি? হবে না।
তাই আপনাকে আপনার ক্রেতা, ক্রেতারা কাদের বিলিভ করে, ক্রেতার মন চিন্তা এসব ও জানতে হবে।অবশ্যয় হারাম থেকে বেচে থাকবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ
আপনার বিজনেস যদি একটু বড় হয় তাহলে আপনি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করতে পারেন। আপনার পণ্য আরেকজন বিক্রি করে দিবে এবং লাভের একটা % সে পাবে।
প্রতিযোগিতা আয়োজনঃ
ইন্টারনেটে অর্থাৎ অনলাইনে টিকে থাকতে হলে আপনাকে রেগুলার আপডেট থাকতে হবে, আপনার ক্রেতার সাথে কানেক্ট থাকতে হবে। ক্রেতাদের কাছে আপনার শুধু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেথাক্লে এক সময় আপনার সব কথা সব ছবি বিরক্ত লাগবে।
বৈচিত্র্য আনার জন্য বছরে একবার দুইবার কন্টেস্ট আয়োজন করতে পারেন।আপনি যদি হিজাব বিক্রি করে থাকেন তাহলে হিজাব নিয়ে বাস্তব গল্প, রিভিউ ইত্যাদির উপর প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন। ১০ জন কে বিভিন্ন লেভেলে পুরস্কার দিন।আপাত ভাবে কিছুটা টাকা লাভ ছাড়ায় ব্যয় হলেও লং টার্মে আপনার লাভ ই হবে আশা করা যায়।
তথ্য দিন ঃ ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
ধরুন আপনি অনলাইনে মেয়েদের কাছে বোরকা বিক্রি করেন। একটা ভালো পোস্ট লিখলেন বোরকার ইতিহাস নিয়ে। প্রথম বোরকা কেমন ছিলো, ১৯০০ সালের বোরকা কেমন ছিলো এসব ইত্যাদির উপর তথ্য দিয়ে লিখবেন যা আগেও তেমন কেউ লেখেনি। আপনার পোস্ট যদি ঠিকঠাক হয় তাইলে সেই একটা পোস্ট ই আপনার বিজনেস কে পরিচিত করতে এনাফ হয়ে যাবার কথা।
একই টিপস অন্য প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রেও খাটে। শুধু টপিক পাল্টাবে আরকি।যেমন আপনি ফেসবুক এ হাতে বানানো গহনা বিক্রি করেন। এবার তাইলে সমুদ্রের ঝিনুক টিনুক নিয়ে তথ্য মূলক লেখা লিখে পোস্ট করেন। ঝিনুক বা আপনারা যা দিয়ে গয়না তৈরি করেন তা নিয়ে অবাক হওয়ার মত তথ্য নেট থেকে খুজে বের করে লিখুন।ইনশা আল্লাহ্ কাজে দিবে।