মোটা হওয়ার উপায় খুঁজছেন? নিশ্চয়ই আপনি তাহলে খুব রোগা! আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু মহলে এজন্য আপনাকে হজম করতে হয় নানা ধরনের কটুকথা! নিজের পছন্দের পোশাক কিনেও পরতে পারছেন না! চিকন হাতে চুড়ি,ব্রেসলেট,ঘড়ি কিংবা কোনো উপলক্ষে মেহেদি কিছুই মানানসই হচ্ছে না! তাহলে গা – ঝাড়া দিয়ে বসুন। জ্বি, পাঠকবৃন্দ! এত সব সমস্যার একটা মাত্র সমাধান আর তা হলো একটু ওজন বাড়িয়ে একটু মোটা হয়ে যাওয়া। আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হলো মোটা হওয়ার সহজ উপায়।
মোটা হওয়ার সহজ উপায়
কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন বাড়ানো যায় তা নিয়েই আমরা আলোচনা করবো। তবে আর দেরি কেন! চলুন জেনে আসি এবং মেনে চলি সহজে স্বাস্থ্য বাড়ানোর টিপস গুলো, আর কুলুপ এঁটে দিই নিন্দুকের মুখে!
মোটা না হওয়ার কারণ কি?
ওজন কিভাবে বাড়াতে হবে তা জানার আগে চলুন জেনে আসি রোগা হয়ে যাওয়ার কারণগুলো। কেননা মোটা হওয়ার জন্য আমাদের এর ঠিক বিপরীত কাজ গুলোই করতে হবে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা খুব বেশি ওজনহীনতায় ভুগছেন তাদের বেশিরভাগই পুষ্টিহীনতার স্বীকার! এখন,আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, “আরে ভাই! ওজন বাড়ানোর জন্য কি আমি কম চেষ্টা করেছি? নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার তো সচরাচর খেয়েছিই, এখানে অপুষ্টিতে ভোগার কি দেখলেন?”
আচ্ছা বলুন তো! “আপনি এই পুষ্টিকর খাবারগুলো কি নিয়ম মেনে খেয়েছেন নাকি বাতাসে ভেসে আসা কথার উপর ভিত্তি করে যে যখন যেটা বলেছে তাই করেছেন?”
শরীরের ওজন কমানো বা বাড়ানো উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে মনে রাখতে হবে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা আর তা হলো আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে নানা ধরনের হরমোন।
এদের কোনোটার হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে যেমন অতিদ্রুত ওজন কমে যায় তেমনি কোনোটার ফলে ওজন হুহু করে বেড়েও যায়।
তাই নানা জনের নানা মতে কান দিলে তো শরীর ঠিক মতো বুঝেই উঠতে পারবে না যে আসলে কোন হরমোনটা তার নিঃসরণ করা দরকার আর কোনটা দরকার না।
তাই, নিয়ম অনুসরণ করাটা খুবই জরুরী। এতো গেলো পুষ্টিহীনতার কথা! এছাড়া আরও যেসব কারণ গবেষণায় উঠে এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ইনফার্টিলিটি
- অস্টিওপরোসিস
- শারীরবৃত্তীয় উন্নয়ন বিঘ্নিত হওয়া
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদি।
মাস্টারবেট এর কারনে মেল হরমোন কমে যায় এবং এতে দেহের ওজন কমতির দিকে থাকে এমন কি হাড় ক্ষয় রোগ ও হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাস্টারবেট বন্ধর উপায়
যাইহোক, এবার আমরা জানবো, ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়:
সহজে মোটা হওয়ার উপায়
ঘুম
পর্যাপ্তের বেশি ঘুমাতে হবে।অনিয়ম করে যখন তখন ঘুমালেও ফায়দা পাওয়া যায়।শরীর মোটা হওয়া কিংবা শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে ঘুমের বিরাট ভূমিকা আছে।
যদি রাতের ঘুমে অনিয়ম করা হয়, তাহলে শরীরে কম পরিমাণ লেপটিন হরমোন উৎপাদন হয়। লেপটিন হরমোনের কম পরিমাণে উৎপাদনই মোটা হওয়ার পেছনে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
আসলে এই হরমোনের কম উৎপাদন মানুষের খিদের পরিমাণ খুব বেশি বাড়িয়ে দেয়।ফলে মানুষ যেকোনো ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে সক্ষম হয় ; যা চূড়ান্তভাবে আপনাকে ওজন বাড়িয়ে একটু মোটা হতে সাহায্য করবে।
পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার
খাবার খাওয়ার সময় প্রথমে ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, তারপর আসবে প্রোটিন জাতীয় খাবারের মেনু। আর সবশেষে কিছুটা সবজিও খেতে হবে।
ধুমপান ত্যাগ
ধুমপানের অভ্যাস কারো থাকলে তা পরিহার করতেই হবে। কেননা, এই অভ্যাস শরীরকে ভেতর থেকে শুকিয়ে ফেলে আরো রোগা পটকা করে ফেলে।
স্ট্রেস না নেওয়া
চাপমুক্ত থাকতে হবে।আপনি যখন কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি নাওয়া- খাওয়া ভুলে যাবেন। আর অতিরিক্ত চিন্তা করার দরূণ আপনার মস্তিষ্কও তেমনি কিছু হরমোন নিঃসরণ করবে যা আল্টিমেটলি আপনার ওজন কমিয়ে দেবে। তাই সুস্বাস্থ্য কিংবা মোটা হওয়ার জন্য সবসময় টেনশন ফ্রি থাকাটাই জরুরী।
নিয়মিত খাওয়া
সময়ে- অসময়ে খেতে হবে।অর্থাৎ, খিদে না থাকলেও খেতে হবে। হয়তো প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে কিন্তু এই অভ্যাস টা মোটা হওয়ার পেছনে বেশ কার্যকরী।যাদের শরীর মোটা হয়, তাদের জন্য আপনার শরীরে বেশ কিছু হরমোন নিঃসরণ করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো Ghrelin হরমোন। প্রতিবার খাবার গ্রহণের সাথে এর নিঃসরণ মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এভাবে শরীরের ওজন বাড়তে পারে।
মাঝে মাঝেই খাওয়া
আরো একটি ব্যাপার হলো, যারা দীর্ঘদিন ধরে উল্টাপাল্টা ডায়েট করেছেন স্লিম থাকার জন্য কিন্তু ফলাফলে হয়ে গিয়েছেন রোগা, তাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে তা হলো দিনকে দিন কম কম খাওয়ার ফলে তাদের পাকস্থলির ইলাস্টিসিটি কমে গেছে।
তাদের উচিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বারবার একটু করে খাওয়া – এভাবে তাদের সংকুচিত হয়ে যাওয়া পাকস্থলীর ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি পাবে। ফলে একটা সময় তারা নিজেরাই পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে পারবে। কেননা তখন তো অল্প আহারে পেটই ভরবে না!
পরিশ্রম কম করা
এবার আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো একটু অলস হয়ে যাওয়ার জন্য। অর্থাৎ, তুলনামূলক কম পরিশ্রম করার জন্য।আপনি আপনার ভারি ভারি ব্যাগ, লাগেজ, ফার্নিচার নড়াচড়া করার জন্য মজুর রাখতে পারেন। যারা কিছু অর্থের বিনিময়ে আপনার কাজগুলো করে দেবে।
আপনার প্রতি মাসের মুদি বাজার কিংবা অন্য কোনো দরকারী কোনো জিনিস আপনি ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে নিতে পারেন যারা এসব জিনিস আপনার বা্ড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে। এভাবে ধীরে ধীরে আপনার ওজন বাড়বে এবং আপনি মুটিয়ে যেতে পারবেন।
রাত জাগার অভ্যাস
একটি স্বভাবত একটা বাজে ও স্বাস্থ্যহানীকর হলেও মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে বেশ সহায়ক।
তবে বিশেষজ্ঞগণ এটা ফলো না করার জন্যই অধিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন।কেননা, এই পদ্ধতির অনুসরণে আপনি একটু মোটা হয়ে যাবেন সত্যি কিন্তু আপনার মূল্যবান কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, মস্তিষ্ক ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে।
মোটা লোকদের সাথে মেলামেশা
বাংলায় একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে – ” সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। অর্থ্যাৎ, মানুষ যাদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের দ্বারাই অধিকতর প্রভাবিত হয়।
তাই মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে আপনার জন্য এবারের টিপস হলো আপনার যেসব বন্ধু বেশ নাদুস- নুদুস তাদের সঙ্গে মেলামেশা করুন। হ্যাং আউট করুন। তাদের লাইফস্টাইল টা নিজের করে নিতে চেষ্টা করুন। আশা করা যায় আপনি শতভাগ সফল হবেন।
মোটা হওয়ার আরো কিছু টিপস বা উপায় আছে যা জানলে আপনার স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে এসব ফলো করে মোটা হওয়ার চাইতে বরং রোগা থাকাই ভালো।
জ্বি! বলছি অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইলের কথা যা আপনার ওজন বাড়িয়ে আপনাকে শারীরিকভাবে মুটিয়ে দেবে।চলুন তবে জেনে নিই সেসব সম্পর্কে :
১. খাবার খাওয়ার আগে পানি খাবেন না।এটা আপনার পাকস্থলীতে জায়গা দখল করে যার ফলে আপনি পরিমাণের তুলনায় কম খাবার খেতে পারেন।
২. প্রতিবারে খাবারের সময়ে বেশি পরিমাণ খাবার খেতে হবে।
৩. খাবার খাওয়ার জন্য বড়সড় প্লেট বা থালা ব্যবহার করতে হবে যাতে করে বেশি খাওয়া যায়।
৪. চা- কফি বেশি খেতে হবে। কফিতে অতিরিক্ত ক্রিম যুক্ত করা যেতে পারে। এটা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
মোটা হওয়ার পেছনে দায়ী কার্যকরী খাবার,
এতো গেলো টিপসের কথা। এবার আমরা জানবো, মোটা হওয়ার জন্য কি কি বিশেষ খাবার মেনুতে রাখতেই হবে।তাহলে আসুন এবারে আলোচনা করি এই বিষয়ে –
দুধ
খাবারের তালিকায় প্রথমেই যে জিনিসটি আসে তা হলো দুধ। এতে আছে ফ্যাট,প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটস সহ নানা পুষ্টি উপাদান। এটি প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। দুধের এই প্রোটিন অংশ টা মাসল বিল্ড আপ করতে অর্থাৎ পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই, আপনি যদি আপনার ওজন বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন ১ অথবা ২ গ্লাস করে দুধ পান করার বিকল্প নেই।
প্রোটিন শেক
এরপর তালিকায় আছে প্রোটিন শেকস।সহজ উপায়ে মোটা হওয়ার জন্য এই খাবারটির ভূমিকা বেশ কার্যকর।আপনি যদি অ্যাথলেট হয়ে থাকেন তবে প্রতি ওয়ার্কআউটের পর নিয়মিত এটা পান করায় ভালো ফলাফল পেয়ে থাকবেন।
ভাত
আমরা সবাই জানি বেশি ভাত খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবেই।আর ওজন বেড়ে যাওয়াটাই মোটা হওয়ার প্রথম লক্ষণ। ভাত হলো কার্বোহাইড্রেটস এ সমৃদ্ধ একটি খাবার। ভাত এ থাকা এই শর্করাই আপনার ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। আমার মতে, ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি ভাত খাওয়া সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।
এবার বলবো কিছু নাস্তার কথা যা আপনার সহজে মোটা হওয়ার পেছনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
এই তালিকায় প্রথমেই আছে বাদাম। এটি ওজন বাড়াতে ও শরীরকে মুটিয়ে দিতে চমৎকার সহায়ক। এরপর পর্যায়ক্রমে আসে
- অ্যাভোক্যাডো
- ড্রাই ফ্রুটস
- বিভিন্ন শস্যের নির্যাস
- ডার্ক চকোলেট
- ডিম
- পনির
- ইওগার্ট বা টক দই।
শেষকথা
পাঠকবৃন্দ! আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম সহজে মোটা হওয়ার কিছু সহজাত উপায় ও খাবার সম্পর্কে। এসব টিপস নিয়মিত ফলো করার পাশাপাশি এসব খাবার গ্রহণ করলে শরীর কর্তৃক মোটা হওয়ার হরমোন প্রাকৃতিকভাবেই নিঃসরণ হবে। এতে করে বেশ সহজেই আপনি ওজন বাড়াতে পারবেন।
যেহেতু এটি ওজন বৃদ্ধির পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপায় তাই একটু সময়সাপেক্ষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এজন্য আপনাকে একটু ধৈর্য ধরে সাধনা করে যেতে হবে। অনেকে অবশ্য ওজন বাড়ানোর পিল খেয়ে থাকেন। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যাইহোক না কেন আজকের আলোচ্য পদ্ধতি গুলো যে সহজে মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে বেশ কার্যকরী এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আপনার রোগা পাতলা শরীরকে ফিট করতে আজ থেকেই আপনার লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনুন।