বাংলাদেশের ফলের নাম পরিচিতি, ভিটামিন এবং ছবি তালিকা

অসংখ্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের এই বাংলাদেশের মাটিই সবথেকে বড় সোনা।সোনা বরন এই মাটি থেকে উৎপাদন হয় নানা ধরনের ফল, ফুল ও ফসল । ঋতু বৈচিত্রের কারনে এই দেশে একেক ঋতুতে ফলে একেক ধরনের ফল।

কত শত সুস্বাদু ফলমূল এদেশের আনাচে কানাচে জন্মায় তার নির্দিষ্ট কোনো হিসেব নেই বললেই চলে।বাংলাদেশ উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের ফলই দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ও খেতেও তুলনাহীন। আমাদের দেশীয় ফলের চাহিদা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছে।একেক অঞ্চল একেক ধরনের ফলের জন্য বিখ্যাত।ছয় ঋতুর বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুতেই জন্মায় কোনো না কোনো ফল।প্রতিটি ফলই পুষ্টিগুণে ভরপুর।আজকের আয়োজনে আমরা বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি ফলের সাথে পরিচিত হবো। চলুন জেনে আসা যাক বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেশ কিছু ফল সম্পর্কে –

১. জাতীয় ফল কাঁঠাল।

ফলের রাজ্যে হানা দিলে সবার প্রথমেই যে ফলটির কথা মাথায় আসে তা হলো কাঁঠাল। বাংলাদেশের জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এই কাঁঠালকে।
অধিক পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ফল পাকলে যেমন সু ঘ্রান ছড়ায়, তেমনি খেতেও লাগে খুব মিষ্টি ও রসালো।

কাঁঠালের ছবি


বাংলাদেশের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি পুষ্টি রয়েছে কাঁঠালে । কাঁঠালে আছে প্রচুর পরিমান থায়ামিন,রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুন থাকা সত্বেও কাঁঠালে ফ্যাটের পরিমান একদমই কম।
বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় কাঁঠালের ফলন সবথেকে বেশি হয়।

২. ফলের রাজা আম

আম পছন্দ করে না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যায়না বললেই চলে। বেশিরভাগ বাঙালির প্রিয় ফলের তালিকায় প্রথম নামটি হলো আম।
আম পাকা ও কাচা দুভাবেই খাওয়া যায়।

কাঁচা আমে আছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি।নিয়মিত কাঁচা আম খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।কাঁচা আমে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম।এই পুষ্টি উপাদান হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কাচা আম খেতে টক স্বাদযুক্ত ।


আমের ছবি


পাকা আম পছন্দ করে না এমন লোক তো নেই বললেই চলে।যেমন রসে ভরা টইটুম্বুর, তেমনি খেতে খুব মিষ্টি আর দেখতেও লোভনীয়।
আম পাকা হোক বা কাঁচা, দুটোতেই প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে।পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন আছে। যেমন- ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬ ইত্যাদি। এছাড়াও আছে পটাসিয়াম, কপার লৌহ এবং এমাইনো এ্যাসিড।
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় আমের ফলন সবথেকে বেশি ভালো হয়।

৩. লিচু

লিচু বাংলাদেশের একটি ক্ষনস্থায়ী সিজনাল ফল।লিচুর সিজন ধরা হয় সাধারণত এক মাস।মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সবথেকে ভালো মানের পরিপক্ব রসালো লিচু পাওয়া যায়

লিচুর পিক

খুবই সুস্বাদু এই ফলটি পাকলে বাইরের আবরণ লালচে রঙের হয় এবং ভেতরে থাকে সাদা।
লিচুতে প্রচুর পরিমানমে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।
খুব অল্প সময় পাওয়া গেলেও ছোট,বড়,যুবক,বৃদ্ধ সবারই খুব পছন্দের ফল লিচু।
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত। এই জেলায় সবথেকে ভালো লিচুর ফলন হয়।বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচু বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় এই অঞ্চলে।

৪. জাম

বাংলাদেশের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে জাম একটি।এদেশে প্রচুর পরিমানে জামের ফলন হয়।পাকা জাম খুব রসালে ও মিষ্টি হয়।টক মিষ্টি স্বাদের কম্বিনেশনের এই ফলটি অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

জামের ছবি


জাম মূলত একটি গৃষ্মকালীন ফল।মার্চ মাসে জামগাছে ফুল আসে এবং ছোট ছোট ফলের গুটি ধরতে থাকে।মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এই ফল ফুলে বড় হয় এবং পাকতে শুরু করে।জাম শুধুমাত্র পাকার পরেই খাওয়ার উপযোগী হয়।ফলের মধ্যে জাম সবথেকে দ্রুত পচনশীল।
ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি এর সবথেকে ভালো উৎস জাম।তাই জাম খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় জামের ব্যবহার রয়েছে।

৫. কলার ভিটামিন তথ্য এবং ছবি 

কলা বাংলাদেশের একটি বারোমাসি ফল।এদেশে বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফলের উৎপাদন হলেও কলার ফলন হয় সারা বছরই।পাকা কলা খেতে খুব মিষ্টি। বাঙালির দৈনন্দিন ফলের তালিকায় অন্য কোনো ফল না থাকলেও কলা থাকবেই।


কলার মধ্যে আছে আবার বিভিন্ন জাত।যেমনঃ সপরি কলা,সাগর কলা,চাপা কলা,কাঁচকলা সহ আরও অনেক ধরনের জাত।জাতভেদে কলার আকার,ঘ্রান ও স্বাদে দেখা যায় নানান বৈচিত্র্য। এর মধ্যে কাঁচকলাকে ফল হিসেবে নয় বরং সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পাকা কলা ভিটামিন বি-৬ এর খুব ভালো একটি উৎস।


কলার ছবি পিক ডাউনলোড

ভিটামিন বি-৬ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।এছারাও কলায় আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি,ম্যাগনেসিয়াম, কপার,ফাইভার,ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান । আপনার ত্বক সুন্দর রাখতে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে কলা খান।কলা আমাদের ত্বকে ক্লিনজিং এর কাজ করে।বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কলার ফলন ভালো হয়।

৬. পেয়ারা পরিচিত এবং পিক

বাংলাদেশের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা খুবই জনপ্রিয় একটি ফল।দামে কম কিন্তু পুষ্টিগুনে শীর্ষে থাকার কারনে এদেশের সাধারণ মানুষ ফল হিসেবে পেয়ারাকে খুব বেশি প্রাধান্য দেয়।
পেয়ারা একটি বারোমাসি ফল।সব ঋতুতেই পেয়ারা উৎপাদন হয় তবে বর্ষা মৌসুমে এর ফলন সবথেকে ভালো হয়।বর্ষার সময় বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকার কারনে এই সময়ের পেয়ারা তুলনামূলক বেশি মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়।


পেয়ারার ছবি


ভিটামিন সি এর উৎস হিসেবে আমলকির পরেই আছে পেয়ারার স্থান।দাত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে ও মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে পেয়ারার অবদান অতুলনীয়। বলা হয়ে থাকে,১ টা পেয়ারা থেকে ৪ টা কমলালেবুর সমপরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কমবেশি পেয়ারার ফল হয়।তবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য।

৭. তরমুজের দাম, পরিচিতি, ছবি

গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড তাপ দাহের সময় বাংলাদেশের মানুষের সবথেকে পছন্দের ফল হয়ে ওঠে তরমুজ। তরমুজ পুরোপুরি পরিপক্ব হলে এর ভেতরটা হয়ে যায় টকটকে লাল। তখনই মূলত তরমুজ খাওয়ার উপযোগী হয়।তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে পুরোপুরি পরিপক্ব হয় ও বাজারে ওঠা শুরু করে।পাকা তরমুজ খেতে খুবই মিষ্টি।


তরমুজের প্রায় ৯৬ ভাগই পানি।তাই গরমের সময় আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরন করতে ও শরীরকে ঠান্ডা রাখতে তরমুজ খুবই উপকারী একটি ফল।এছারাও তরমুজে আছে প্রচুর খনিজ লবন যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা,বরিশাল ফেনী অঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হয়।

৮.বাঙ্গি

বাঙ্গি বা ফুটি শসা জাতীয় একধরনের দেশীয় ফল।কাঁচা থাকতে এই ফল সবুজ বর্ণের হয়,পাকলে সোনালী রং ধারণ করে ফেটে যায়।এই ফলটির মিষ্টতা কম এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানাদার বেলে স্বাদযুক্ত।
বাঙ্গি গ্রীষ্মকালীন ফল, সাধারণত তরমুজের সাথে সাথেই বাজারে উঠতে দেখা যায় এই ফলটি।

বাঙি খেতে খুব বেশি সুস্বাদু না হলেও পুষ্টিমানে ভরপুর এই ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বাঙিতে প্রচুর পরিমাননে ভিটামিন সি ও বিটাক্যারোটিন রয়েছে।যা আমাদের শরীরের ঘা শুকাতে খুব দ্রুত কাজ করে।বাঙ্গিতে চিনির পরিমান খুবনকম হওয়ার কারনে ডায়াবেটিস এর রোগীরাও এই ফলটি নির্দিধায় খেতে পারবে।বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমানে পানি, যা গরমে আমার শরীরকে ঠান্ডা রাখে।আমাদের ত্বক সুন্দর রাখতে বাঙ্গির উপকারিতা রয়েছে।

সব ধরনের চর অঞ্চলেই বাঙ্গির চাষ করা যায়।

৯. পেঁপে

ঔষধি গুণসম্পন্ন পেঁপে খুবই সুস্বাদু আরেকটি দেশীয় ফল।কাঁচা পেঁপেকে সবজি হিসেবে আর পাকা পেপেকে ফল হিসেবে খাওয়া হয়।
সবুজ বর্ণের কাচা পেপে পেকে হলুদ বা সোনালী বর্ণ ধারণ করলে খেতে খুবই মিষ্টি লাগে।বাংলাদেশের মানুষের পছন্দের ফলের তালিকায় আছে পাকা পেঁপে একটি।


পেঁপের কোনো নির্ধারিত মৌসুম নেই।পেঁপে উৎপাদন হয় বারো মাস এবং বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই পেঁপের ফলন ভালো হয়।বাড়ির আনাচে কানাচে,পতিত জমি,পুকুর পাড়,ছাদের বেড সব জায়গায়ই পেঁপে গাছ রোপন করা যায়।এই ফল উৎপাদনের জন্য গাছের কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না।

পেঁপেতে আাছে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট।এছারাও ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুনে ভরপুর এই পাকা পেঁপে। মরন ব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগের বিরুদ্ধেও পেঁপে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এতে থাকা ভিটামিন ই আমাদের চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করে।

১০. আনারস

আনারস বাংলাদেশের আরও একটি অধিক ফলনশীল, জনপ্রিয় ফল।আনারসের আছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুন।
জৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধুমাস,আর সব থেকে ভালো আনারস এই জৈষ্ঠ্যমাসেই পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইলের মধুপুর আনারসের জন্য বিখ্যাত।


আনারসের ছবি


আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসকল উপাদান আমাদের শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আনারসে আছে পর্যাপ্ত পরিমান ফাইবার যা আমাদের দেহের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। এতে ফ্যাটের পরিমান একদমই কম।

১২. কামরাঙা

ভিটামিন সি এর সবথেকে উৎকৃষ্ট উৎস হলে কামরাঙা। এটি একপ্রকার টক জাতীয় ফল।তবে পাকার পরে বেশিরভাগ কামরাঙ্গা খেতে মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং যে কোনো ক্ষত শুকাতে সবথেকে বেশি কার্যকরী ফল কামরাঙা।


বাংলাদেশের সব জেলাতেই কামরাঙার ফলন হয়।বাড়ির ছাদে, টবে,বাগানে বা বাড়ির যে কেনো যায়গাই এই গাছ লাগানো যায়।নানা ধরনের ঔষধ তৈরিতে কামরাঙা গাছের বিভিন্ন অংশ ও ফল ব্যবহার করা হয়।

১২. ডালিম

আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে ডালিম দেখত সবথেকে বেশি সুন্দর। পাকা ডালিমের ভেতরের ছেট ছোট দানা টুকটুকে লাল রঙের হয়।ডালিম দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন মজা।ছোট থেকে বড় সবারই এই ফলটি খুব পছন্দের।


ডালিমে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে- শর্করা,প্রোটিন,পটাশিয়াম,ভিটামিন সি, ভিটামিন কে’ এবং ফ্যাট।
ডালিম আমাদের দেহের শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে,ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর করে,রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে,হৃদপিণ্ডের কার্যকরিতা বৃদ্ধি করে।
সারাবছরই ডালিম গাছে ফুল ও ফল হয়।তবে বর্ষা ও বসন্ত ঋতুতে ডামিল গাছে সব থেকে বেশি ফুল আসে।

১৩. বেল

আমাদের দেশের সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরপুর আরেকটি ফল হলে বেল।কাঁচা অথবা পাকা দুই অবস্থাতেই বেল খাওয়া যায়।কাচা বেল আমাশয় রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
পাকা বেলের শরবত খেতে খুবই সুস্বাদু । পাকা বেলে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্চনায় বেল ও বেল পাতার বহুল ব্যবহার রয়েছে তাই একে শ্রীফল বলেও অভিহিত করা হয়।

মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে বেল গাছে ফুল ধরে এবং পরের বছর ঠিক একই সময়ে বেল পাঁকে।
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বেল জন্মায়। বানিজ্যিক ভাবে বেলের চাষ খুব কম হয়।

১৪. আমলকির উপকারিতা এবং ছবি

আমলকি বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল। আমাদের দেশীয় ফল গুলোর ভিতর আমলকিতে সবথেকে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে, ত্বক ও চুলের যত্নে আমলকির বহুল ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতেও আমলকি ব্যবহার করা হয়।


বর্ষাকাল আমলকির চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় এবং আগস্ট – নভেম্বর মাসের দিকে পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করা যায়।আমলকি গাছ ৪/৫ বছর বয়স হলেই ফল দেয়া শুরু করে।
বাংলাদেশের মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়া অঞ্চলে আমলকির ফলন সবথেকে ভালো হয়।

১৫. জামরুল

যদি বলা হয় আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে সবথেকে বশি দেখতে সুন্দর কোন ফল– তাহলে সবার প্রথমেই মাথায় আসে জামরুলের নাম।লাল ও সাদা উভয় রঙেরই হয় এই ফলটি।গাছে থোকা থোকা জামরুল ঝুলে থাকলে দেখতে খুবই নজরকাড়া লাগে।মনে হয় ফুলের থোকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।


জামরুল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন মজার এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ এই ফলটি আমাদের হজমে সাহায্য করে।নিয়মিত জামরুল খেতে পারলে আমাদের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।জামরুলে আছে প্রচুর পরিমানে পানি ও খনিজ লবন রয়েছে।

জামরুল চাষের উপযুক্ত সময় মে মাস থেকে জুলাই মাস।তবে সারা বছরই কম বেশি জামরুলের ফলন হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলই জামরুলের চাষ করা যায়।

১৬. সফেদা

খুবই রসালো,দানাদার ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফল সফেদা।পাকার পরে এই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। সফেদায় আছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান।ক্যালসিয়াম, লোহা ও ফসফরাস সফেদায় পাওয়া যায়।এসব পুষ্টি উপাদান হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে, ত্বক ও চোখ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। । এই ফল মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।


প্রায় সারা বছরই বাংলাদেশের সফেদার ফলন হয়।তবে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত- সবচেয়ে বেশি ফলন হয়।বর্তমানে ব্যপক হারে বানিজ্যিক ভাবে সফেদার চাষ হয়।
সফেদা বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল বিধায় এই ফল চাষ করে চাষিরা খুবই লাভবান হচ্ছেন।

১৭. বড়ই

বড়ই বাংলাদেশের খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফলটির সাথে সবারই কম বেশি ছোটবেলার শৈশবের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশে বেশ কিছু জাতের বড়ই উৎপাদন হয়।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হলোঃ দেশি টক বরই,নারকেল বরই,আপেল কুল,বাউ কুল,থাই কুল ইত্যাদি।
টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলে যেসকল পুষ্টি উপাদান রযেছে তা হলোঃ ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি।


বড়ই আমাদের বেশকিছু রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।যেমনঃ বরই হার্ট ভালো রাখে,রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রন করে,হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,রক্তকে বিশুদ্ধ করে,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,যকৃতকে কার্যকরী করে তোলে,হজমে সাহায্য করে।

সেপ্টেম্বর- অক্টোবরে মাসে গাছে ফুল আসে এবং সেই ফুল থেকে পরিপক্ব বড়ই পাওয়া যায় শীত মৌসুমে। বাড়ির আশেপাশে, বারান্দায়, ছাদের টবে,বাগানে ও পতিত জমিসহ যে কোনো জায়গায় বড়ই গাছ বেড়ে উঠতে পারে।

১৮. লটকন

বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত ফল হলো লটকন।এলাকা ভেদে এই ফলটি বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামে পরিচিত।কোনো এক সময় মানুষ লটকনের ব্যবহার সম্পর্কে অবগত ছিল না।কিন্তু বর্তমানে এই ফলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই ফল।তাই এখন ব্যপকহারে লটকনের চাষ করে তা বাজারজাত করা হয়।


লটকনকে মূলত ভিটামিন বি সমৃদ্ধ ফল হিসেবে অভিহিত করা হয়।এছাড়াও লটকনে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি১, লৌহ, খনিজ পদার্থ ও আমিষ রয়েছে।
এই ফল খেলে বমি ভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়।অন্যদিকে লটকনের পাতা শুকনো করে গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমে। লটকন খেলে আমাদের মুখের স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং খাবারের রুচি বাড়ে। এছাড়াও লটকনে প্রচুর পরিমানে আয়রন বা লৌহের উপস্থিতির কারনে দেহের রক্তশূন্যতা দূর হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের নরসিংদী, লালমনিরহাট, গাজীপুর,সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বানিজ্যিক ভাবে লটকনের চাষ হয়।
সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন পরিপূর্ণ খাওয়ার উপযোগী হয় এবং তা বাজারজাত করা হয়।

১৯.জাম্বুরা

জাম্বুরা আমাদের দেশের বহুল পরিচিত লেবু জাতীয় একধরনের ফল।এই ফল সাধারণ রসালো ও টক মিষ্টি হয়।এলাকা ভেদে জাম্বুরা একাধিক নামে পরিচিত। এই যেমন ধরুন- বাতাবি লেবু, তুরুনজা ইত্যাদি।

জাম্বুরার উপকারিতা

জাম্বুরায় আছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। যেমনঃ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি২, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস,পটাশিয়াম,সোডিয়াম,নিয়াসিন, খাদ্যআঁশ,থায়ামিন,শর্করা,প্রোটিন ইত্যাদি।
জাম্বুরা খেলে ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর জনিত সমস্যার সমাধান হয়। ক্যান্সারের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে জাম্বুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ডায়াবেটিস, নিদ্রাহীনতা, মুখের ভেতরে ঘা, হাত পা ফাটা রোগ প্রতিরোধে জাম্বুরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

নানা রঙের, নানা স্বাদের ও ঘ্রানের ফল ফলাদি দিয়ে সমৃদ্ধ আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে প্রতিটি ফলই সহজলভ্য ও দামের দিক থেকেও বিদেশি ফলের তুলনায় অনেক গুন কম।দেখা যায় প্রতিটা ফলেরই কোনো না কোনো পুষ্টিগুন রয়েছে এবং সবগুলো ফলই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাইলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি করে দেশীয় ফল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Previous Post