শাড়ির দাম ও ছবি | জামদানী, কাতান, মনিপুরি শাড়ির দাম, আসল নকল চেনার উপায় এবং যত্ন করার নিয়ম

বাজারে এখন বিভিন্ন রকমের শাড়ি পাওয়া যায়। একেক শাড়ির একেক রকম নাম,ধরন,দাম একেক রকম।দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইন্ডিয়ান শাড়ি।।তবে এতো শাড়ির ভীড়ে জামদানী, কাতান,মনিপুরী শাড়ির চাহিদা বরাবরের মতো শীর্ষে।

যদিও এখন বাংলাদেশি মেয়েরা সচেতন এবং শিক্ষিত হতে শিখেছে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারছে। তাই অনেক মেয়েই বাইরে বোরকা পরে বের হয়। এটাই হওয়া উচিৎ। শাড়ি এগুলো নিজের ঘরের মধ্যে পরার জন্য ঠিক আছে। সেজেগুজে স্বামীর সাথে সময় কাটাতে শাড়ি বেশ উত্তেজক পোশাক। এজন্য আমরা ভারতের ধর্মে মেয়েদের শাড়ি পরে অর্ধ নগ্ন হয়ে নৃত্য করার ব্যাপার দেখতে পায়। কেননা শাড়ি উত্তেজনা তৈরি করতে পুরুষ কে উৎসাহিত করে।

কিন্তু আমাদের মুসলিম বাংলাদেশে শাড়ি পরে এজন্য বাইরে বের হওয়া আমাদের সাথে মানানসই না। তাও আজকের পোস্টে অনেক ধরনের শাড়ির দাম ছবি যত্ন নেওয়ার নিয়ে তথ্য দিয়েছি যাতে করে আপনাদের শাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারনার স্বীকার হতে নাহয়। অল্প দামের শাড়ি বেশি দামে কিনে আফসোস করতে না হয়।

জামদানী শাড়ির ছবি


আজকের লেখা থেকে আপনারা জামদানী, কাতান,মনিপুরী শাড়ি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাবেন। এছাড়া বিভিন্ন শাড়ির ছবিও দেখে নিতে পারবেন। 

আজকের পোস্টে যা যা জানতে পারবেনঃ বিভিন্ন শাড়ির দাম ও ছবি 

  1. জামদানী শাড়ির ছবি, দাম, চেনার উপায়
  2. কাতান শাড়ির দাম এবং যত্ন 
  3. মনিপুরি শাড়ির তথ্য 

জামদানী শাড়ির দাম, ছবি এবং ভালো জামদানী চেনার উপায় 

জামদানী শাড়ি তার বুনন ও সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জামদানী শাড়ি অনেক সুন্দর মাধুর্য্যপূর্ণ হয়ে থাকে।তবে বর্তমানে বাজারে আসল জামদানী শাড়ির পাশাপাশি অনেক নকল জামদানী শাড়ির ছড়াছড়ি।
জামদানী শাড়ি সম্পর্কে আজ যে সব আলোচনা থাকবে।

  1. জামদানী শাড়ির কাউন্ট।
  2. জামদানী শাড়ি চেনার উপায়।
  3. জামদানী শাড়ির যত্ন।

জামদানী শাড়ির কাউন্ট এবং আসল নকল চেনার উপায়

জামদানী শাড়ি মূলত সুতার কাউন্টের হিসেবে তৈরি করা হয়ে থাকে।জামদানী সুতা ৩০-২৫০ কাউন্টের পর্যন্ত হয়ে থাকে।এই কাউন্টের উপর ভিত্তি করে জামদানী শাড়ির ডিজাইন এবং দাম নির্ধারণ করা হয়।


সুতার কাউন্ট যতো বেশি জামদানী শাড়ির দাম তত বেশি আবার সুতার দাম যতো কম শাড়ির দাম তত কম।।আর বেশি কাউন্টের সুতা হয় অনেক চিকন।কম কাউন্টের সুতা হয় একটু মোটা।তাই জামদানী শাড়ি কেনার আগে সুতা সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রোয়জন।কারণ বর্তমানে বাজারে জামদানী শাড়ির চাহিদা কে পুঁজি করে অনেক নকল জামদানী শাড়ি তৈরি করা হয়।


আসল জামদানী শাড়ি গুলো সম্পূর্ণ হাতে বোনা হয়ে থাকে।আর নকল জামদানী গুলো মেশিনে বোনা হয়ে থাকে। মেশিনে বোনা জামদানী শাড়ির কাউন্ট থাকে ২৪-৪০ পর্যন্ত।আর মেশিনে বোনা জামদানী শাড়ির সুতা একটু ভারী হয়ে থাকে।

জামদানী শাড়ির ছবি দেখান এবং দাম


নাইলনের সুতা হয় মসৃণ আর জামদানী সিল্কের সুতায় থাকে মাড় দেওয়া। যার জন্য জামদানী সিল্কের সুতা হয় অমসৃণ। সাধারণত পিওর সিল্কের যে সুতা হয় তা টানাটানি করলে ছিঁড়ে যায়।এই সুতা আগুনে পোড়ালেও চুল পুড়ালে যেমন গন্ধ পাওয়া যায় অনেকটা তেমন গন্ধ পাওয়া যায়।


সুতা পরীক্ষা করার আরেকটা পদ্ধতি হলো আঁচলের শেষ প্রান্তের সুতা আঙুল দিয়ে মোড়ানোর পর যদি সুতা গুলো জড়িয়ে যায় তবে সেটা সিল্ক সুতার তৈরি।


আর যদি সুতা গুলো আঙ্গুলে মোড়ানোর পরেও যদি সামান থাকে তাহলে তা নাইলন সুতার তৈরি।
সুতার কাউন্টের উপর জামদানী শাড়ির দাম ঠিক করা হয়।৩০০০-৪০০০ টাকার শাড়ির সুতার কাউন্ট ৩০/৪০ এর বেশি হবার কথা নয়।


তেমনি ৮৪ কাউন্টের শাড়ি ৪০,০০০-৮৫,০০০ টাকা হয়ে থাকে।এভাবে সুতার কাউন্ট যতো বেশি হবে সেভাবে একটা শাড়ির মূল্য লাক্ষের কোটায় পোঁছে যায়।

বাংলাদেশে জামদানী শাড়ির দাম ও পিক

জামদানী শাড়ি চেনার উপায়

জামদানী শাড়ি ঠিক ভাবে চিনতে না পারলে দোকানদাররা কম কাউন্টের শাড়ি বেশি কাউন্টের শাড়ি বলে বুঝিয়ে দিয়ে বেশি টাকা খুব সহজেই পকেটে নিয়ে নিতে পারবে।তাই কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখতে পারলে আসল জামদানী শাড়ি সঠিক দামে কিনতে সুবিধা হবে।

  1. জামদানী শাড়ি ওজনে হালকা হয়।
  2. জামদানী শাড়ি সম্পূর্ণ হাতে বোনা হয়।
  3. হাতে বোনা জামদানী শাড়ির কোমর পর্যন্ত কোন পাড় থাকেনা।মেশিনে বোনা শাড়ির সম্পুর্ন তে পাড় করা থাকে।
  4. জামদানী শাড়ি হাতে বোনা হয় তাই এর কারুকাজ নিখুঁত হয়ে থাকে।শাড়ির কোন অংশ বাড়তি সুতা থাকেনা।মেশিনে বোনা শাড়ির উল্টা পাশে বাড়তি সুতা বেড়িয়ে থাকে।
  5. জামদানী শাড়ি সিল্ক সুতার তৈরি হয়।মেশিনে তৈরি শাড়ি নাইলনের সুতার তৈরি হয়।
  6. জামদানী শাড়ি হাতে বোনা হয়ে থাকে তার জন্য এর কাজ নিখুঁত ও মসৃণ হয়।মেশিনের তৈরি জামদানী শাড়ির কাজ একটু খসখসে হয়।

হাতে বোনা জামদানী শাড়ি কোথাও কম দামের ভিতর পাওয়া যাবে না কারণ একেকটা জামদানী শাড়ি হাতে বুনতে এক সপ্তাহ থেকে ছয় মাস পর্যন্তও সময় লেগে যায়। আর এদিকে মেশিনে এক সপ্তাহে ৮/১০ টা শাড়ি তৈরি করা হয়।

শাড়ির ছবি ও দাম । বিয়ে গায়ে হলুদ পার্টি

জামদানী শাড়ির যত্ন করবেন কিভাবে? 

জামদানী শাড়ি চিকন সুতার তৈরি আর হাতে বোনা তাই এর যত্ন অন্য শাড়ি থেকে আলাদা ভাবে নিতে হয়।নাহলে জামদানী শাড়ি খুব সহজে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
জামদানী শাড়ি হাতে বোনা আর নরম সুতার তৈরি তাই জামদানী শাড়ি ভাঁজ করে রাখা যাবে না।শাড়ি ভাঁজ করে রাখলে সুতা ফেসে বা ছিঁড়ে যাবে।


জামদানী শাড়ি কোনভাবেই বাসায় ধোঁয়া যাবেনা, ডিটারজেন্ট তো ব্যবহারই করা যাবে না।জামদানী শাড়ি পরিস্কার করার জন্য কাটা ওয়াশ করতে হবে।কাটা ওয়াশের জন্য জামদানী শাড়ি আবার নতুনের মতো হয়ে যাবে।


জামদানী শাড়ি নরম পাতলা কাগজ দিয়ে বা নরম পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে।
জামদানী শাড়ি পরার পর হালকা রোদে বা বাতাসে দিয়ে তারপর রাখতে হবে।
জামদানী শাড়ি নরম সুতার তৈরি তাই দীর্ঘদিন এক ভাঁজে রাখা যাবে না।মাঝে মাঝে ভাঁজ বদলে রাখতে হবে।

হলুদ জামদানি শাড়ির ছবি

জামদানী শাড়ি অনেকদিন ব্যবহার না করলেও নষ্ট হয়ে যায়। তাই শাড়ি মাঝে মাঝে ব্যবহারে ভালো থাকবে।
জামদানী শাড়ির পাড়ে ফলস লাগিয়ে নিলে শাড়ির পাড় সহজে নষ্ট হবেনা বা জুতার ঘষাতে ছিঁড়ে যাবেনা।
জামদানী শাড়ি অনেক পাতলা হয় তাই এর কাপড় দিয়ে ব্লাউজ না বানিয়ে বাড়তি কাপড় কিনে ব্লাউজ বানিয়ে জামদানী কাপড় দিয়ে হাতায় পিঠে ডিজাইন করে নিলেও খুব সুন্দর লাগবে ।

কাতান শাড়ীর দাম, ছবি, চেনার উপায় এবং যত্ন

কাতান শাড়ির চাহিদা মাঝে কিছু টা বিদেশি শাড়ির চাহিদার পিছনে পরে গেলেও বর্তমান সময়ে কাতান শাড়ি নারীদের অনেকটা জায়গা দখল করে আছে।এখন নিত্য নতুন কাতান শাড়ির কালেকশন পাওয়া যাচ্ছে।কাতান শাড়ি এক কালারের উপর জাঁকজমকপূর্ণ কারুকাজের হয়ে থাকে।কাতান শাড়ির উপর গোল্ডেন আর সিলভার কালারের কাজ বেশি থাকে।


কাতান শাড়ি সম্পর্কে যে বিষয় গুলো আলোচনায় থাকবেঃ

  1. কাতান শাড়ির প্রকারভেদ।
  2. কাতান শাড়ি চেনার উপায়।
  3. কাতান শাড়ির যত্ন।
কাতান শাড়ির দাম এবং ছবি

কাতান শাড়ির প্রকারভেদ

বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাতান শাড়ি আছে।কাতান শাড়ির ভিতরেরও বিভিন্ন নামের আলাদা আলাদা কাতান শাড়ি দেখা যায়।

  • বেনারসি কাতান।
  • বাটিক কাতান।
  • ফেন্সি কাতান।
  • চুনরি কাতান।
  • কটন কাতান।
  • বুটিক কাতান।
  • সিল্ক কাতান।
  • জরজেট কাতান।

এছাড়াও আরো অনেক মানের কাতান শাড়ি আছে।

কাতান শাড়ি চেনার উপায় ও পিকচার

কাতান শাড়ি চেনার উপায়

আসল কাতান শাড়ির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো দেখে সহজেই কাতান শাড়ি যাচাই বাছাই করে কেনা যায়।

  1. কাতান শাড়ি গুলো প্রকৃতিক তন্ত দিয়ে তৈরি।রেশম আর সিল্ক সুতার।
  2. কাতান শাড়ির জমিনে বেনারসি মোটিফের বিভিন্ন কারুকাজ করা থাকে।
  3. কাতান শাড়ির উল্টো পাশে সুতার পরিস্কার বুনন দেখা যায়। ভিতরে কোন প্রকার কাটিং মার্ক বা আলগা সুতা থাকেনা।
  4. কাতান শাড়িতে হালকা কাজ থেকে গরজিয়াছ কাজ থাকে যার জন্য সব বয়সী মহিলারা পছন্দ অনুযায়ী পরতে পারে।
  5. কাতান শাগির ওজন হালকা হয়।
কাতান শাড়ির যত্ন কিভাবে

কাতান শাড়ির যত্ন

  1. কাতান শাড়ি ড্রাই ক্লিন করতে হবে।বাসায় ওয়াশ করা যাবে না।
  2. শাড়ি পরার পর নরম তুলা জাতীয় ব্রাশ দিয়ে পরিস্কার করে নেওয়া যাবে।
  3. কাতান শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে আলমারিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
  4. হালকা রোদে দিতে হবে। বা পরার পর বাতাসে মেলে দিতে হবে।
  5. কাতান শাড়ি গ্যাস পলিশ করলে একদম নতুনের মতো হয়ে যাবে।

মনিপুরী শাড়ি ছবি, দাম এবং যত্ন

সিলেটের ঐতিহ্যবাহি জিনিসের ভিতর মনিপুরী শাড়ি অন্যতম।শ্রীমঙ্গলের হাতে বোনা আসল সুতি মনিপুরী তাঁতের শাড়ি।সিলেট অঞ্চলের জনপ্রিয় শাড়ি হাতে বোনা মনিপুরী শাড়ি।

মনিপুরী শাড়ি চেনার উপায়

  1. মনিপুরী শাড়ি জালি বুননের হয়।
  2. মনিপুরী শাড়ি সম্পূর্ণ সুতি শাড়ি।এ মাড়ি অন্য কোন সুতা ব্যবহার করা হয়না।
  3. মনিপুরী শাড়ি বোনার সুতাতে মাড় ব্যবহার করা হয়।
  4. মনিপুরী শাড়ি হালকা হোক বা গাঢ় হোক পাড় হবে গাঢ়।
  5. মনিপুরী শাড়ির পাড় হবে টেম্পেল আকৃতির।
  6. মনিপুরী শাড়ির ভিতরে হালকা লতাপাতার নকশা থাকে।
  7. মনিপুরী শাড়ি হয় উজ্জ্বল রঙের।
  8. মনিপুরী শাড়ি একটু মাড় দেওয়া হয়ে থাকে।

মনিপুরী শাড়ির যত্ন

  • মনিপুরী শাড়ি ৪/৫ বার ব্যবহার করার পর ওয়াশ করা যাবে।
  • মনিপুরী শাড়ি বাসায় পরিস্কার করা যাবে। শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নেওয়া যাবে।
  • শাড়ি ডলা ঘষা করা যাবে না।
  • শাড়ি বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা যাবে না।
  • মনিপুরী শাড়ি ওয়াশ করার পর হালকা মাগ বা এ্যারারুট ব্যবহার করতে হবে।
  • হালকা রোদে শুকাতে হবে।কড়া রোদে দেওয়া যাবে না।
  • আয়রন করে ভাঁজ করে আলমারিতে রাখা যাবে।
Next Post Previous Post