ফেসবুক গ্রুপের মেম্বার এবং পোস্ট রিচ বৃদ্ধি করা যায় কিভাবে?

আমরা পেজ সেটাপ এবং পেজের রিচ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে আমাদের টপিক গ্রুপ নিয়ে।
কিভাবে গ্রুপ তৈরি করবেন, গ্রুপ সেটিংস কেমন হবে, গ্রুপে মেম্বার কিভাবে বৃদ্ধি করবেন এবং অন্য গ্রুপে কিভাবে আপনার পোস্টের রিচ বাড়াবেন এসব বিষয় নিয়ে আজকের ক্লাস।

1. গ্রুপ খোলার আগে আপনাকে একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে আপনার নিজের আইডি তে ৩/৪ হাজার ফ্রেন্ড রাখা দরকার এবং আপনার ফ্রেন্ড এন্ড ফ্যামিলি মেম্বার দের আইডিতেও যত বেশি ফ্রেন্ড এড থাকবে তত আপনার জন্য সহজ হবে গ্রুপ দাড় করানো। 


আপনার আইডি তে ২০০ মেম্বার আছে এমন হলে হুট করে গ্রুপ খুলে ফেলবেন না। 
এবার গ্রুপ তৈরি করা এবং গ্রুপের সেটিং কেমন রাখবেন সে বিষয়ে আসি।
গ্রুপ তৈরি করা একদম সোজা।ফেসবুক এর গ্রুপ অপশনে যাবেন, গ্রুপের নাম দিবেন প্রাইভেসি সিলেক্ট করবেন ফ্রেন্ড ইনভাইট করবেন কিছু… ব্যাস হয়ে গেছে গ্রুপ খোলা।


আপনার গ্রুপ যদি সবার জন্য হয় তাহলে প্রাইভেসি পাবলিক রাখবেন আর যদি  একান্তই আপনার বিজনেস কেন্দ্রিক এবং পার্সোনাল টাইপ গ্রুপ করেন তাহলে প্রাইভেট রাখা ভালো। এতে করে মেম্বাররা সিকিউরড ফিল করে। আর মূলত এজন্যই ফেসবুক ২টি প্রাইভেসি অপশন রেখেছে। 

আপনার বিজনেস পেজের কভার পিকচার ই গ্রুপের কভারে দিতে পারেন। তবে ভালো হয় আপনি যেসব প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দিয়ে থাকেন তার লিস্ট নিয়ে ডিজাইন করা ছবি দিলে।


এতে করে যে লাভ হয় টা হলো যেসব ফেসবুক ইউজার আপনার গ্রুপে জয়েন নেই তারাও গ্রুপের বাইরে থেকে জাস্ট কভার ছবি দেখেই জানতে পারে গ্রুপে তারা কি কি সেবা পেতে পারে। আর এই জানার মাদ্ধমেই আগ্রহিরা আপনার গ্রুপে জয়েন হতে আগ্রহ পাবে। 


গ্রুপের নাম আপনার মূল বিজনেসের নামের সাথে মিল রেখে রাখতে পারেন কিংবা ইউনিক কোন নাম যেটা ছোট কিন্তু সুন্দর এমন নাম দিতে পারেন। 

গ্রুপ খোলার সাথে সাথে নেক্সট কিছুদিন বিজনেসের সময়ে আপনার প্রধান কাজ হবে গ্রুপে মেম্বার এড করা। মনে রাখবেন শুরুতেই যদি গ্রুপ কে এক্টিভ করে তুলতে না পারেন তাহলে পরে অনেক চেষ্টা করেও গ্রুপ তোলা কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময়  অনেকে হাল ই ছেড়ে দেই কারন গ্রুপ আর বড় হয় না।তাই গ্রুপ খোলার সাথে সাথে চেষ্টা করবেন প্রথম এক মাসেই ভালো এমাউন্ট মেম্বার এড করে নিতে।


–যেহেতু গ্রুপ আপনার সেহেতু সেই গ্রুপ একটিভ রাখার দায়িত্ব ও আপনার। মেম্বাররা নিয়মিত পোস্ট দিবে গ্রুপে একটিভ থকবে এমন আশা করে বসে থাকবেন না। 
প্রতিদিন বেশ কয়েকটা করে পোস্ট দিবেন গ্রুপে। কিছু বিজনেস রিলেটেড কিছু নরমাল। কিছু পোস্ট দিবেন মেম্বারদের সাথে আড্ডা দিতে। এভাবে গ্রুপ কে চাঙ্গা রাখতে হবে। 


গ্রুপে যখন ভালো সংখ্যক মেম্বার হয়ে যাবে তখন গ্রুপে কিছু রুলস ঠিক করে দিবেন। কিভাবে পোস্ট দিবে, কয়টা পোস্ট এসব রুলসে বলে দিবেন। 
গ্রুপ যখন এই পর্যায় এসে গেছে তখন আপনার কাজ হচ্ছে  ধিরে ধুরে গ্রুপ কে বড় করে তোলা। আর গ্রুপ বড় করতে হলে আপনাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদি।


১।যারা নতুন মেম্বার আসবে তাদের মেনশন করে শুভেচ্ছা পোস্ট করবেন।  

২। গ্রুপে মাঝে মধ্যে কন্টেস্ট আয়জন করবেন এবং কন্টেস্টে গিফট রাখবেন।

৩। মেম্বারদের সাথে কমেন্ট পোস্টের মাধ্যমে আড্ডা দিবেন। তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এর মত সম্পর্ক তৈরি করবেন। আপনি এডমিন আপনি মোডারেটর আপনি বিশাল কিছু এই মনোভাব থাকলে আপনার গ্রুপে মেম্বাররা আগ্রহ হারাবে। 
আপনার গ্রুপে অন্য ১০ জন মেম্বার এর মতই আপনিও একজন মেম্বার, তাদের সবার সাথে পজিটিভ থাকার চেষ্টা করবেন। 


৪। আপনি যেহেতু শখের বসে গ্রুপ খুলেননি বরং  বিজনেসের জন্য গ্রুপ খুলেছেন সেহেতু গ্রুপ একটু বড় হওয়া মানে ৬/৭ হাজার মেম্বার হওয়ার পর চেষ্টা করবেন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করতে।


ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বলতে বুঝায় আপনার বিজনেসের সাথে রিলেটেড কোন ভাল উত্তম সেলিব্রেটি টাইপ কাউকে দিয়ে আপনার পেজের কিংবা গ্রুপের কথা বলানো।যেহেতু তাদের অনেক বেশি ফলোয়ার থাকে আর সেসব ফলোয়ার আপনার বিজনেসের সাথে রিলেটেড ও তাই তারা ঠিক মত আপনার গ্রুপ প্রমট করে দিলে দ্রুত গ্রুপের মেম্বার বাড়বে এবং গ্রুপে এক্টিভিটী বৃদ্ধি পাবে।


এরপর আপনার দায়িত্ব হবে গ্রুপ কে প্রাসঙ্গিক পোস্ট কমেন্ট কন্টেস্ট এসবের মাধ্যমে গ্রুপ কে এক্টিভ রাখা। যেহেতু গ্রুপ আপনার সেহেতু প্রতিদিন আপ্নাকেই  বেশি বেশি পোস্ট দিয়ে গ্রুপ কে এক্টিভ রাখতে হবে।
গ্রুপ খোলা এবং বড় করার কাজ আপাতত এটুকুই। কারন আপনি জোর করে গ্রুপ বড় করতে পারবেন না। গ্রুপ যদি ঠিক থাক হয় তাহলে ইউজাররাই আপনার গ্রুপে জয়েন হবে। আর গ্রুপ যদি ঠিক ভাবে না থাকে তাহলে মেম্বার এড করলেও তারা লিভ নিয়ে চলে যাবে।


তাই গ্রুপে মোটামোটি মেম্বার হয়ে গেলে এরপর থেকে মেম্বার বাড়ানোর চেয়ে গ্রুপ কে মানসম্মত এবগ্ন এক্টিভ রাখতে চেষ্টা করবেন। সব কিছু ঠিক ভাবে থাকলে অটোমেটিক মেম্বার বাড়বে।
আর মেম্বারদেরকে তাদের ফ্রেন্ড এড করতে আহবান জানাতে  ভুলবেন না। 


এতক্ষন বললাম কিভাবে নিজের বিজনেসের জন্য নিজেই গ্রুপ খুলে সেটাকে কাজে লাগাবেন। এখন বলবো অন্যদের গ্রুপে কিভাবে নিজের পোস্টের রিচ বাড়াবেন।


  আপনি প্রোডাক্ট সেল করার জন্য আপনার নিজ জেলার এক্টিভ এবং বড় কয়েকটি গ্রুপ সিলেক্ট করে নিন। গ্রুপ যদি এক্টিভ হয় তাহলে কম মেম্বার হলেও সমস্যা নেই।


তবে এক সাথে অনেক্কক্কক্ক গুলো গ্রুপে জত্র তত্র ভাবে না থেকে বরং নিজের জেলার কয়েকটা গ্রুপে আপনি একদম ফুল টাইম মেম্বার হয়ে জান। সেসব গ্রুপ গুলো তে আপনি আপনার সেল পোস্ট ছাড়াও অন্য মেম্বারদের হেল্প করুন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন, কেউ কিছু খুজলে কোন সেলারকে ম্যানশন দিন। মোট কথা আপনি আপনার নিজের গ্রুপে যেভাবে থাকতেন সেভাবেই এসব গ্রুপে থাকবেন।শুধু সেল করার জন্য পোস্ট দিয়ে চলে গেলেই হবে না, আপনাকে গ্রুপের একজন একনিস্ট সদস্য হতে হবে। 

 
গ্রুপে এক্টিভ থাকা মানে একাধারে সবার পোস্টে লাইক কমেন্ট করবেন না। সব কিছুর একটা লিমিট আছে। আপনি প্রয়োজনে ও প্রয়োজনে সবার পোস্টেই কমেন্ট করে গেলে ফেসবুক এলগোরিদম সেটা বুঝতে পারে আপনি স্প্যাম করছেন আর ফেসবুক স্প্যামারদের আইডি সাস্পেন্ড না করলেও ডাস্টবিনে ফেলে দেয় অর্থাৎ এসব আইডির রিচ কমিয়ে দেয়।


তাই কমেন্ট করুন লাইক দিন কিন্তু সেটা বুঝে শুনে। এক্টিভ থাকার জন্য স্প্যাম করবেন না। 
১০টা অহেতুক কমেন্ট ের চাইতে ২টা উপকারি কমেন্টের মাধ্যমে আপনি গ্রুপের মেম্বারদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন বেশি। 


একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি আপনার বিজনেস কখনই আরেকজনের গ্রুপের উপর নির্ভর করে করবেন না। একাধিক গ্রুপকে আপনার নিজের গ্রুপের মত করে নিবেন। আপনার বিজনেস হবে আপনার আইডি ভিত্তিক আপনার পেজ ভিত্তিক আপনার গ্রুপ এবং অন্যান্য গ্রুপ ভিত্তিক।

এভাবে আপনি যখন আপনার বিজনেস কে নানামুখি ভাবে সেট করবেন তখন কোন গ্রুপের উপর আপনাকে ভরসা করে বসে থাকতে হবে  না সেসব গ্রুপের এডমিন মোডারেটরদের তেল দিয়ে কথা বলতে হবে না আবার তাদের গ্রুপ নস্ট হলেও আপনার বিজনেস নস্ট হবে না।

গ্রুপে কেমন পোস্ট দিবেন? 


অবশ্যয় ভালো কোয়ালিটির ছবি সহ পোস্ট দিবেন। আপনার প্রডাক্তের  জন্য  হোলসেলারের তোলা ছবিই ইউজ করেন তাহলে সেই একই প্রোডাক্ট নিয়ে অন্য যারা বিজনেস করছে তাদের মধ্যে আপনি হারিয়ে যাবেন। আপনার উচিত হবে প্রোডাক্ট আপনার কাছে আসলে সুন্দর করে কিছু ছবি  তোলা। আপনার ছবি যত সুন্দর হবে ক্রেতারা তত বেশি আগ্রহি হবে সেটার ব্যাপারে।


ক্রেতারা কিন্তু প্রথমে লেখা পড়ে না, তারা প্রথমেই ছবি দেখে তারপর ছবি সুন্দর হলে আগ্রহি হলে লেখা পড়ে। তাই চেষ্টা করবেন ছবি ভালো মানের দিতে। ইউনিক ছবি ইউজের চেষ্টা করবেন। 


সব সময় সেল পোস্ট না দিয়ে মাঝে মাঝে ভিন্ন রকমের পোস্ট ও দেওয়ার চেষ্টা করবেন।আপনার নিজের গ্রুপে সপ্তাহে একদিন উন্মুক্ত দিবস রাখবেন যেদিন মেম্বাররা ফ্রি ভাবে আন রিলেটেড পোস্ট ও করতে পারবে। ের মাধ্যমে গ্রুপের সাথে মেম্বারদের এক্টিভিটি বৃদ্ধি পাই।অনেকেই আছে যারা ড্রেস কিনতে আগ্রহি না কিন্তু তাদের ওয়ালে যখন মজার কোন পোস্ট যাবে গ্রুপ থেকে তখন সে আপনার গ্রুপে ঘুরে দেখবে আর ের মাধ্যমে আপনি তার কাছেও আপনার গ্রুপের পোস্ট আরো বেশি রিচ করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। 

অনেক বিজনেস গুরু আছে  যারা কয়েক বছর ধরে একটা বাজে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে আর টা হলো ফেসবুকে বিজনেস করতে হলে প্রোডাক্টের সাথে নিজের ছবিও এড করতে হবে। এতে করে সেল বাড়ে!!বাজে কথা এটা।আপনি যখন কোন কিছু কিনেন তখন কি সেলার দেখতে কেমন তার ছবি কেমন সেসব দেখেন নাকি তার প্রোডাক্ট দেখেন?


শত শত বছর ধরে পুরুষরা শাড়ি ব্লাউজ লেহেঙ্গা হাড়ি পাতিল খাবার সব কিছুরর বিজনেস করে আসছে নিজেকে প্রোডাক্ট হিসাবে বিক্রি না করেও।আর এখন মেয়েদের ছোট খাটো বিজনেস করতে হলে নাকি সেখানেও নারিকে তার চেহারা দেখিয়ে বিজনেস করতে হবে!! 
আপনি আপনার প্রোডাক্ট এবং নিজের ব্র্যান্ডিং এর দিকে নজর দিন, এসব কে প্রমট করুন। নিজের চেহারা কে বিক্রি করে বিজনেস করবেন না। অল্প কিছু টাকার জন্য পাপ করে বিজনেস করা দুনিয়া আখিরাত ২টার জন্যই ক্ষতিকর। 

যাই হোক।  আপনি আপনার পেজের রিচ বৃদ্ধি করছে গ্রুপে পোস্ট রিচ বেশি এরপরেও আপনার ব্যবহার যদি সুন্দর না হয়, ক্রেতার নানারকম হাবিজাবি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি আপনি আপনার কুলনেস হারিয়ে ফেলেন তাহলে কিন্তু আপনার বিজনেস করা কঠিন হয়ে যাবে।


মনে রাখবেন আপনার পোস্টের রিচ পেজের রিচ এসব কিন্তু আপনাকে টাকা দিবে না, টাকা দিবে ক্রেতা, সেই আপনার মূল টার্গেট তাই পেজ পোস্টের রিচ বাড়ানতে যত চেষ্টা করবেন তারচেয়ে বেশি চেষ্টা করবেন কাস্টমারের মন জয় করতে তার আস্থা অর্জন করতে। তাদের সাথে ভালো সম্পক তৈরি করতে পারলে আপনি পোস্ট না দিলেও তারা আপনার থেকে কেনার জন্য নক করবে। 

Next Post Previous Post