মেয়েদের এবং পুরুষের মাথার চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় ও ডাক্তারের পরামর্শ
ইন্টারনেটে চুল পড়া কমানো কিংবা নতুন চুল গজানো নিয়ে অনেক পোস্ট আছে। ইউটিউবে ভিডিও আছে। এগুলোর একটা কমন ব্যাপার কি জানেন? এদের অধিকাংশই সমস্যা সমাধানের চেয়ে পোস্ট/ ভিডিও তে ভিউ বাড়ানোকেই প্রাধান্য দেয় যার ফলে যেটা পাই সেটাই সমাধান হিসাবে বলে দেই। পেয়াজের রস ভিত্তিক পোস্ট!
আজকে আমি আপনাকে ১৬ টি ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া কমানোর উপায় এবং একই সাথে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এমন টিপস দিবো যেগুলো এর আমেরিকান ডাক্তার এর থেকে নেওয়া।
আমি শুধু মাত্র বাংলা ভাষায় আপনাদের কাছে সেগুলো তুলে ধরছি। আপনারা চাইলে ট্রাই করে দেখতে পারেন। ভালো ফল পেলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
আর মনে রাখবেন চুল একদিনে পড়ে যায় না কিংবা চুল পড়ার প্রক্রিয়া একদিনে হয় না তাই নতুন চুল গজাতে কিংবা চুল পড়া কমিয়ে ফেলতে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। একটা ট্যাবলেট খাইলাম আর মাথা ভর্তি চুল আর চুল এমন সম্ভব না। অন্তত এখনো সম্ভব হয়নি। তাই মিনিমাম ৬ থেকে ৮ মাস চেষ্টা করে যাবেন। ইনশা আল্লাহ্ ভালো ফল পাবেন।
কি কি পাবেন এই পোস্ট থেকে?
- চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
- চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ডাক্তারের পরামর্শ
- পুরুষের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- মেয়েদের মাথার চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম
১৬ টি ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া কমান এবং নতুন চুল গজাতে চেষ্টা করুন
১। গ্রিন টি
না খাবেন না। বরং পানিতে মিশিয়ে মাথায় দিয়ে রাখবেন। ১৫ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
২। পেয়াজের রস
অর্ধেক পানি এবং অর্ধেক পেয়াজের রস মিশিয়ে মাথায় মাসাজ করুন কিছুক্ষন। ১৫ মিনিট রেখে দিন এবং এরপরে ভালো ভাবে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৩।রোজমেরি তেল
রোজমেরি তেল চুলের এনজাইম এর জন্য উপকারি। রাতে মাথায় এই তেল দিএ রাখবেন এবং সকালে ধুএ ফেলবেন।
৪। জিঙ্ক
অনেকের জিংক এর অভাবে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত জিংক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহনের চেষ্টা করবেন। গরুর মাংসে জিঙ্ক পাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছেও জিঙ্ক পাবেন।
৫। এপল সিডার ভিনেগার
কাপের ১/৩ পরিমান ভিনেগার নিয়ে এক লিটার পানিতে মিশিয়ে মাথায় মালিশ করবেন। এপল ভিনেগার চুলের গোঁড়ায় জমা হওয়া সিবাম দূর করতে সাহায্য করে। সিবাম আসলে এক প্রকার তেলের মত, এটি জমা হলে চুলের ফলিকল বৃদ্ধিতে সমস্যা তৈরি করে। এপল ভিনেগার এই সিবাম দূর করে মাথা পরিস্কার করে এবং চুল ও শাইনি হয়।
৬। প্রোটিন
আমাদের চুল আসলে প্রোটিন দিয়ে তৈরি। চুলের ৯১% প্রোটিন। তাই আপনার যদি প্রোটিন এর স্বল্পতা থাকে তাহলে সেটা চুলের জন্য ক্ষতিকর। যেসব খাবারে ভাল পরিমানে প্রোটিন থাকে সেগুলো আপনার লিস্টে রাখার চেষ্টা করুন।
৭। ট্রেস মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার
সামুদ্রিক মাছ ও সাগরের লবনে ট্রেস মিনারেল আছে। যদিও ট্রেস মিনারেল অল্প পরিমানে প্রয়োজন তবে অল্প হলেও এর গুরুত্ব অনেক।
– ভিটামিন বি। চুল পড়ার কারন হিসাবে অনেক সময় ভিটামিন বি স্বল্পতা দায়ি থাকে। তাই ভিটামিন বি গ্রহন করুন। শাক সবজিতে ভিটামিন বি থাকে।
৮। এস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণ
মেয়েদের মাথার চুল পড়ার একটি কারন হিসাবে এটি থাকতে পারে। এস্ট্রজেন হরমোন আসলে মেয়েদের শরীরে বেশি থাকে। অতিরিক্ত এস্ট্রজেন হরমোন চুল পড়ার কারন হতে পারে। এজন্যই দেখবেন মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালিন অনেক মেয়েই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগে। কারন কি? কারন হলো মেয়েদের মাসিকের সময়ে তাদের শরীরে বেশি এস্ট্রজেন হরমোন থাকে।
মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ঔষধ
তো কিভাবে এস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রনে রাখবেন? মুলা, বাধা কফি ফুল কফি খান। এগুলো এস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে।
আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার বা লবন ও এস্ট্রজেন কন্ট্রোল করতে হেল্প করে। তাই বলে কাচা লবন খাওয়া শুরু করবেন না কিন্তু।
৯। স্ট্রেস – করটিসল।
করটিসল প্রোটিন এর ক্ষতি করে ার চুল প্রোটিন দিএ তৈরি তাই করটিসল চুলের জন্য ক্ষতিকর। আমরা যখন স্ট্রেস থাকি তখন করটিসল তৈরি হয় যা আমাদের মাথার চুল পড়ার কারন হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন স্ট্রেস ফ্রি থাকতে।
১০। সেলেনিয়াম
সেলেনিয়াম হাইপোথাইরোয়েড প্রসেস এর মাধ্যমে চুল কে হেল্প করে। থাইরয়েড যদি স্লো হয় তাহলে চুল পড়তে পারে আর সেলেনিয়াম স্লো এর পরিবর্তে হাইপোথাইরোয়েড অবস্থা তৈরি করে। ফলে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। ব্রাজিল নাট এবং সি ফুডে সেলেনিয়াম পাবেন।
১১। ভিটামিন ডি ৩
D3 ভিটামিন একই সাথে আমাদের স্ট্রেস কমাতে এবং চুলের যত্নে কাজে লাগে। আগেই বলেছি স্ট্রেস আমাদের চুলের ক্ষতি করে। ভিটামিন ডি চুলের জন্য উপকারি একইসাথে স্ট্রেস কমাতেও হেল্প করে। ১ ঢিলে ২ পাখি।
ভিটামিন ডি খেতে পারেন কিংবা সূর্যের মাদ্ধমেও ডি ভিটামিন পেতে পারেন। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে এটা অনেকেই জানেন আশা করি।
১২। ব্যায়াম এবং ঘুম
ব্যায়াম এবং ঘুম আসলে আমাদের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। আর ঘুম তো এমনিতেও শরীরের অন্যান্য অংশের জন্যও অনেক জরুরী।
১৩। সিলিমা সমৃদ্ধ খাবার
সিলিকা আমাদের চুল ও নখ কে শক্তিশালী করে। অনেকের চুল আছে সামান্য টান লাগলেই ছিড়ে যায় আবার অনেকের চুল আছে বেশ শক্তিশালী। সিলিকা আমাদের চুল কে শক্তিশালী করতে হেল্প করে। ঝর্নার পানিতে সিলিকা থাকে।
সিলিকা সমৃদ্ধ খাবার কি কি?
- কলা
- ব্রাউন চাল
- ডাল
১৪। রোজা রাখা
রোজা রাখা আমাদের শরীরের সকল কিছুর জন্যই উপকারি। গবেষণায় দেখা গেছে আরব দেশে রোজা রাখার কারনে সেখানে পৃথিবীর অন্য দেশের চাইতে ক্যানসার এর পরিমান কম। এছাড়াও রোজা আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তিক বিভিন্ন কাজে গতি আনতে সাহায্য করে।
১৫।বায়োটিন
চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে চেস্টা করছেন এমন অনেকেই বায়োটিন এর সাথে পরিচিত। কারন এটি কমন একটি উপায়।
বায়োটিন আসলে একটি ভিটামিন বি যা আমাদের দেশের প্রোটিন কে সাহায্য করে। বিশেষ করে চুলের প্রোটিন। এজন্যই চুল পড়া কমাতে অনেক মেডিসিন ই বায়োটিন ভিত্তিক হয়ে থাকে।
১৬। ভিটামিন সি।
আমাদের চুলের জন্য কেরাটিন ভাইটাল একটা উপাদান আর ভিটামিন সি কেরাটিনের জন্য উপকারি।
চিরতরে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় আছে কি?
আসলে আমি জানি না। কেননা আমাদের শরীরের বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন এফেক্ট আসে। বয়সের সাথে সাথে দাত চুল পড়ে যায়, শক্তি কমে যায়। তাই চিরতরে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় আসলে আছে কিনা সন্দেহ। তবে স্থায়ী ভাবে চুল পড়া বন্ধ করা মানে দুদিন পর পর চুল পড়া শুরু হয় এটা বন্ধ করার উপায় হিসাবে উপরের দেওয়া পদ্ধতি গুলো কাজে লাগাতে পারেন।
চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায়
ইসলাম একটি কমপ্লিট জীবন বিধান। কিভাবে খাওয়া শুরু করবেন কিভাবে ঘুমাবেন থেকে শুরু করে কিভাবে যুদ্ধ করবেন সব ই ইসলামিক ভাবে পাবেন।
আচ্ছা চুল পড়া কমাতে ইসলামিক কোন উপায় আছে?
আমার জানামতে শরীর সাস্থের জন্য কিছু দোয়া আছে । চুল তো আমাদের শরীরের ই একটি অংশ তাই সেসব দোয়া গুলোও চুলের জন্য করা যাতে পারে হইতো।।
আর ইসলাম আমাদের সুস্থ ভাবে বাচার আদেশ দেয়। আমরা রাত ২ টা পর্যন্ত সজাগ থাকি, ঘুম থেকে উঠি ১০ টার পর। এগুলো ইসলাম এর সাথে যায় না। আর এমন অভ্যাস আমাদের চুল আমাদের শরিরর জন্যও ক্ষতিকর। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, ফজরে উঠেন, সময় মত খাবার খান। মধু, কালোজিরা খান এসবগুলো আমাদের চুলের জন্য ভালো।
আমরা প্রেম করি, রিলেশন নিয়ে স্ট্রেস আর স্ট্রেস!! এই স্ট্রেস চুলের জন্য বিশাল খারাপ একটি বিষয়। ইসলাম আমাদের এমন প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে থাকতে বলে।
আপনি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত সম মত আদায় করুন, অজু করুন, চুলে তেল দিন, মেসওয়াক করুন, ফিউচার নিয়ে অহেতুক চিন্তা বাদ দিন। আরেকজন কি করলো, কে এগিয়ে গেলো, কে আপনার থেকে বেশি ইঙ্কাম করছে, আপনার গফ কিংবা বফ কার সাথে চ্যাট করছে এসব থেকে দূরে থাকুন। এসব গুলোই ইসলামের আদেশ যা আমাদের শরীরের জন্যই উপকারি।