জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা ও এর ব্যবহার বা খাওয়ার এর নিয়ম
জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা
জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে নিঃসন্দেহে আপনি আবাক হয়ে যাবেন। জয়তুনের ফল ও তেল বরকত ও প্রাচুর্যে ভরপুর।
যুগ যুগ ধরে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে জয়তুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনকি পবিত্র কুরআন এ জয়তুন ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ফলে রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি উপাদান। যা শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু আমাদের মধ্যে কয়জন জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানে? খুব কম মানুষই জানে। কারণ মানবজাতি এখন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অভস্ত্য। কিন্তু একটু চেষ্টা করলে প্রকৃতি থেকেই বহু জটিলতার সমাধান খুজেঁ বের করা যায়। তেমনি একটি অসাধারণ ফল জয়তুন। তাই আপনাদের আজকে জয়তুন ফল ও তেলের উপকারীতা সম্পর্কে জানাতে চলে এসেছি। চলুন আমাদের সাথে জেনে নিন, জয়তুন ফল ও তেল খাওয়ারউপকারিতা ।
জয়তুন ফল
জয়তুন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হল Olea europaea. এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার একটি ফল। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে এই ফলের কথা উল্লেখ রয়েছে।
![](https://1.bp.blogspot.com/-C_QApAzSwRc/YIPZimn0fpI/AAAAAAAAVwo/p_xupEncThc7lWPiFL1Bic7mhK4OS67egCLcBGAsYHQ/s320-rw/joitun%2Bfol%2Bgach.jpg)
আরবীতে জয়তুন কে তরল সোনা বলেও ডাকা হয়। নানা ধরনের ঔষধি গুনে ভরপুর এই ফল। তাছাড়া যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় জয়তুনের পাতাকে।
নবীজীর (সা.) প্রিয় ফল জয়তুন
জয়তুন ফল, আমাদের নবী (সা.) এর প্রিয় ফল গুলোর মধ্যে একটি। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে দুটি ফলের কসম খেয়েছেন। তার একটি ত্বীন ও অপরটি ছিল জয়তুন। তাই এই জয়তুন গাছকে মুবারক গাছ হিসেবে গন্য করা হয়। প্রিয় নবী (সা.)- এর খুবই পছন্দের ফল ছিল এই জয়তুন। আর এর তেল রাসূল (সা.) নিজে ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি অন্যদের ও ব্যবহার করতে উপদেশ দিতেন। প্রিয় নবী (সা.), জয়তুন ফল ও তেলকে বরকত ও প্রাচুর্যময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জয়তুন ও জলপাই কি এক?
পবিত্র কুরআন এ উল্লেখ করা সেই জয়তুন ফলের জন্ম সিনাই পাহাড়ে। আমাদের দেশে যে জলপাই পাওয়া যায় সেগুলো আর জয়তুন ফল এক নয়।
পরিবেশগত কারণে আমাদের দেশে যে জলপাই হয় সেগুলোর সাথে জয়তুন ফলের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। জয়তুন ফল আকারে কিছুটা ছোট হয়। তবে গবেষকরা জয়তুন ফল ও জলপাই এর মধ্যে অনেক গুনগত মিল খুঁজে পেয়েছেন। সহজ কথায়, জয়তুন ও জলপাই এক নয়। তবে এদের গুণগত বৈশিষ্ট্যে অনেক মিল রয়েছে।
তাছাড়া আমরা যে অলিভ অয়েল ব্যবহার করি, সেটিই জয়তুন এর তেল। জলপাই থেকে প্রকৃতপক্ষে কোন তেল তৈরি করা হয় না। আর তৈরি হলেও সেটা বানিজ্যিক ভাবে সফল নয়।
জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা
জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধানের জন্য জয়তুন ফল ও তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। রূপচর্চা থেকে শুরু করে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে জয়তুন ফল ব্যবহৃত হয়৷ আমরা আজকে জয়তুন ফল ও তেলের সব রকম তথ্য ও উপকারীতা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। চলুন তাহলে জেনে নিন জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা সম্পর্কে –
![](https://1.bp.blogspot.com/-7fzOmaoQJDo/YIPZikrFVmI/AAAAAAAAVws/7jhxfjiK-lYoK8djeFoZJfkQL5_c3MM7gCLcBGAsYHQ/s320-rw/%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A8%2B%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25B2%2B%25E0%25A6%258F%25E0%25A6%25B0%2B%25E0%25A6%259B%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF.jpeg)
জয়তুন ফল খাওয়ার উপকারিতা
১. ফাইবারের চাহিদা পুরণঃ জয়তুন ফলে রয়েছে প্রচুর আশঁ বা ফাইবার। এটি ফল বা সবজি হিসেবে খেতে পারেন। এবং ফাইবারের চাহিদা পুরণ করতে পারেন।
২. কোষের সুরক্ষাঃ জয়তুনের ফল এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা কোষের সুরক্ষা দেয়।
৩. টিউমারের সমাধানঃ জটিল টিউমার বা ক্যান্সার রোগ মুক্তির জন্য জয়তুনের ফল খুবই উপকারী।
৪. দাঁতের যত্নঃ দাঁতের ক্যাভিটি রোধ ও মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধ করে জয়তুন ফল। রাসুল (সা.) এই জন্যই একে উত্তর মিসওয়াক হিসেবে উল্লেখ করেন।
৫. স্মৃতিভ্রমের চিকিৎসাঃ স্মৃতিভ্রম বা অ্যালজেইমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এই ফল।
৬. খনিজ সমৃদ্ধঃ সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রনের মত খনিজের ঘাটতি পুরণ করে জয়তুন ফল।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসাঃ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ও মুক্তি পেতে সাহায্য করে জয়তুন ফল।
৮. ক্যান্সার ঝুঁকি রোধঃ ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করতে জয়তুন ফলের উপকারীতা অপরিসীম। কারণ এটি কোষের মেমব্রেন কে রক্ষা করে ক্যান্সারের বিস্তার কমায়।
৯. ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে জয়তুনের ফল ব্যবহার করা হয়।
১০. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধঃ রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে জয়তুন ফল।
জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম
জয়তুন ফল সরাসরি খেতে অনেকেই পছন্দ করেন না। তবে জয়তুন ফলের ঔষধি ফলাফল পেতে গরম জলের সাথে মিশিয়ে সেবন করা হয়।
তাছাড়া অনেকে আচার হিসেবে জয়তুন ফল খেয়ে থাকেন। তবে খালি পেটে জয়তুন ফল না খাওয়া উত্তম। এবং অতিরিক্ত জয়তুন ফল সেবন করলে অনিদ্রা, মাথাব্যাথা ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই জয়তুন ফল পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
![](https://1.bp.blogspot.com/-VhLmAIvOQuU/YIPZiu2ZmzI/AAAAAAAAVww/YmvwbZYGCq8t0BnRi-NG1nLVQRyHqbKSQCLcBGAsYHQ/s320-rw/%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A8%2B%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25B2%2B%25E0%25A6%258F%25E0%25A6%25B0%2B%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%259A%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0.jpg)
জয়তুন তেলের উপকারিতা
১. ভিটামিন-ই সমৃদ্ধঃ
জয়তুনের তেল ভিটামিন -ই সমৃদ্ধ। যাদের ভিটামিন-ই এর অভাব রয়েছে তারা অবশ্যই জয়তুনের তেল খেয়ে দেখতে পারেন।
২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ
জয়তুনের তেল আমারে শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কারণ এতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। জয়তুনের তেল রক্তের কোলেস্টেরল দূর করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩.রক্তশূন্যতা প্রতিরোধঃ
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতেও জয়তুনের তেল বিশেষ ভুমিকা রাখে। সাধারণত যেসব মেয়েরা রক্তশূন্যতায় ভোগের তাদের জন্য জয়তুনের তেল খুবই কার্যকরী।
৪. ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
টিউমার, ক্যান্সার সমস্যার চিকিৎসায় জয়তুনের তেল ভাল কাজ করে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে জয়তুনের তেল।
৬. জন্মদাগ থেকে মুক্তিঃ
সন্তানের জন্মগত দাগ এড়াতে, গর্ভবতী মেয়েরা জয়তুনের তেল মালিশ করতে পারে। তাছাড়া সন্তান জন্মদানের পর শরীরে যে দাগ তৈরি হয় তা থেকে মুক্তি পেতে জয়তুনের তেল ব্যবহার করা যায়।
৭. দাঁতের সুরক্ষাঃ
দাঁতের ক্যাভিটি, শরীরের রগ ফুলে যাওয়া এসব সমস্যার সমাধানে জয়তুনের ফল খুবই উপকারী।
৮. চুলের যত্নঃ
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জয়তুনের তেলের কোনো জুরি নেই। এই তেল মাথায় মালিশ করলে চুলের বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা যায়।
৯. তারুণ্য ধরে রাখাঃ
বয়সের ছাপ কমাতেও জয়তুনের তেল এর ব্যবহার ব্যাপক। মুখের ত্বকে নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহার করলে দারুণ ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
১০. উত্তম ব্যথানাশকঃ
ব্যথানাশক ঔষধের বিকল্প হিসেবে জয়তুনের তেল ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া জয়তুনের তেলে থাকা অলেইক এসিড হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
Pure olive তেল শুধুমাত্র শরীর মালিশের কাজে ব্যবহার করা হয়।
Extra Virgin তেল কাঁচা ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ রান্নার পর, সালাদ তৈরী, চুলে ম্যাসাজ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।
Extra Light তেল অল্প সময়ে ফ্রাই এর কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন – মাছ ভাজা,ডিম ভাজা, সবজি ভাজি।
Pomace Oil ব্যাবহার করা হয় দীর্ঘ সময় ভাজার কাজে। অর্থাৎ চপ,পাকোড়া, পিঁয়াজু এসব ভাজার কাজে ব্যবহৃত হয়।
শেষ কথা
জয়তুনের অনেক আশ্চর্যজনক উপকারীতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেকের ই সেগুলো অজানা। তাই নানা ধরনের ঔষধি গুনে ভরপুর এই ফলটির সাথে অনেকেই পরিচিত নয়। তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে, রূপচর্চা করত এবং নানা ধরনের আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় জয়তুন ব্যবহৃত হচ্ছে।
অনেক ডাক্তার সুস্বাস্থ্যের জন্য জয়তুনের ফল ও তেল গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা আজকে এই অসাধারণ ও বৈচিত্র্যময় জয়তুন ফলের গুনাগুন আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি।আশা করি জয়তুন ফল ও তেলের উপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন আপনাদের কাজে আসবে।