কিভাবে সব সময় হাসি খুশি আনন্দে থাকবেন? মন হাসি খুশি রাখার উপায়

দিন দিন আমরা রোবোটিক হয়ে যাচ্ছি। আগের দিনের ভালো জিনিস গুলো হারিয়ে ফেললেও নতুন প্রযুক্তি আমাদের সেসব এর বিকল্প দিতে পারছে না। আমরা ফেসবুক এ বসে এখন ২৪ ঘণ্টা বন্ধুদের সাথে গল্প করতে পারছি ঠিক কিন্তু আগে বাইরে ১ ঘণ্টা বসে গল্প করার আনন্দ খুশি এসব ঐ ফেবুতে ২৪ ঘণ্টার চ্যাটে পাওয়া যায় না। আজকে এই পোস্টে সব সময় ভালো থাকা হাসি খুশি থাকার উপায় নিয়ে কিছু টিপস দিবো। সব সময় যদি নাও পারেন তাও আশা করি অনেক সময় এই টিপস গুলো ফলো করে ভালো ফলাফল পাবেন। 

  1. একা খুশি থাকার উপায়
  2. কাউকে ভুলে থাকার সহজ উপায়
  3. জীবনে একা থাকা অনেক ভালো
  4. নিজেকে ভালো রাখার উপায়
  5. মন খুশি রাখার উপায়

১। অতীত নিয়ে বাড়তি চিন্তা বন্ধ করুন। একা ভালো থাকার উপায় এটি 

অতীত কে একেবারে ভুলে যান বা এমন কিছু আমি বলতে চাচ্ছি না কিন্তু অনেকে আছে অবসর পেলেই নিজের অজান্তেই অতীতে ফিরে যায়। মনে রাখবেন অতীত ভালো হলেও আপনার মন খারাপ হবে আবার অতীত খারাপ হলেও আপনার মন খারাপ হবে।

কেউ অতীতে আপনাকে ভালোবাসতো এটা এখন ভাবলে সেই ভালোবাসার জন্য মন খারাপ হবে।

আবার অতীতে কেউ আপনাকে রিজেক্ট করছিলো এটা যদি মনে করেন তাহলে সেই রিজেক্ট হওয়ার কষ্ট আবার নতুন করে পাবেন।

ঘটনা কিন্তু অতীতেই হয়ে গেছে তাহলে সেই ঘটনা কে বার বার বর্তমানে টেনে এনে বর্তমান সময় কে বিষণ্ণ করা কেনো? সব সময় ভালো থাকতে চাইলে অতীত কে ভুলে সামনে চলুন। 

২। আশা প্রত্যাশা কম করুন। সুখে থাকার উপায় পেয়ে যাবেন মেবি 

আমাদের দুঃখ পাওয়া কষ্ট পাওয়ার অন্যতম একটি কারন হলো আশা করা, বেশি প্রত্যাশা করা।

“আমি তো ওকে এতো এতো কেয়ার করি এতো ভালোবাসি তাইলে ও আমাকে কেয়ার করে না কেন ভালোবাসে না কেন ।” 

আপনি আপনার স্ত্রী কে বা স্বামী কে বা বন্ধু কে ভালোবাসেন এটা আপনার ইচ্ছাতেই বাসেন, কেউ আপনাকে ফোরস করেনি। এটা আপনার সিদ্ধান্ত দায় আপনার। এখন আপনি যদি কাউকে ভালবেসে ভাবেন সেও আপনাকে সমান ভাবে বা বেশি ভালোবাসবে তাহলে আপনি কষ্ট পাবেন এটা মোটামোটি শিউর বলা যায়। 

আশা কম করেন প্রত্যাশা কম করেন। যদি কাউকে কিছু দেন টা নিজের জায়গা থেকে ভালোবেসে দেন, ওপাশ থেকে সেও দিবে এটা ভেবে দিলে লস আপনার। 

৩। একা ভালো থাকতে বাস্তববাদি হয়ে উঠুন। 

আগের পয়েন্টে আশা করার সাথে সাথে এই বাস্তব বাদি হওয়ার মিল আছে। কারন যারা বাস্তববাদী তারা সহজে আবেগি প্রত্যাশা করে না ফলে আগে থেকেই জানে কার কাছ থেকে কত টুকু আশা করা যায়।

উলটা হয় আবেগি মানুষ গুলোর ক্ষেত্রে। এরা নিজেরা উজাড় করে ভালোবাসবে উজাড় করে কেয়ার করবে আর ভাববে অপর পাশের মানুষটাও তার সাথে সেম করবে অর্থাৎ তাকে উজাড় করা ভালোবাসা ফেরত দিবে!!!

না ভাই এটা এমন হয় না বেশির ভাগ সময়েই। 

তাই আবেগ না বাস্তব দিয়ে ভেবে বাস্তববাদী হোন। অনেক প্যারা কমে যাবে। 

মন হাসি খুশি রাখা

৪। লেখালেখি করুনঃ মন খুশি রাখতে হেল্প করবে 

অনেকে বলে ডায়েরি লিখতে, আমি বলি ডায়েরি হোক বা ব্লগ কিংবা ফেসবুক নোট আপনি যেখানে পারেন সেখানে অর্থবহ কিছু লিখুন। লক্ষ রাখবেন লিখতে গিয়ে আবেগে নিজের পাপ, দুর্বলতা এসব লিখবেন না। আপনার মনে হতে পারে এসব লিখে নিজেকে হালকা করা যায় , কিন্তু আসলে আপনার দুর্বলতা যত মানুষ জানবে তত আপনার ক্ষতি। 

আপনি অর্থবহ কিছু লিখুন। নিজের ব্যাপারে যদি সব দিক সামলে লিখতে পারেন তাহলে সেটাই লিখুন।

৫।পুরাতন স্মৃতি বহনকারী বস্তু সরিয়ে ফেলুন।

অনেকের কাছে পুরাতন বন্ধু বান্ধবদের দেওয়া অনেক উপহার থেকে যায় যা বারবার দেখলে অতীত মনে পড়ে আর মন খারাপ হয়ে যায়। এসব বস্তু গুলো যাদের কাজে লাগবে তাদের কে আপনি দিয়ে দেন। জমা করে রাইখেন না। কাউকে ভুলে থাকার জন্য এটি ভালো উপায় বলা যায়। তাই কাউকে ভুলতে তার কথা মনে পড়বে এমন সব বস্তু সরিয়ে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে বফ গফ ঘটনা হলে তো আরো আগে সরিয়ে ফেলা উচিত।  

৬। ভার্চুয়াল স্মৃতি রিমুভ করুন। হাসি খুশি থাকুন 

কোন পোস্ট দেখলে আপনার দিন খারাপ যায়। ইনবক্সে ঢুকলে কারো নাম দেখলে খারাপ লাগে। যদি এমন হয় তাহলে চেষ্টা করুন সেসব মুছে ফেলতে। বিলিভ মি মুছে ফেলার সময় অনেক কিছু মনে আসলেও একবার মুছে ফেলতে পারলে কিছুদিন পর দেখবেন অনেক হালকা বোধ করছেন।

এসব স্মৃতি আমাদের সামনে আগানোর পথে বাধা।  মুছে ফেলুন। 

৭। ভালো বন্ধুদের সাথে গল্প করুন।

শুরুতেই বলেছি আগের বাইরে ১ ঘণ্টা আড্ডা এখন ফেবুতে ২৪ ঘণ্টা চ্যাট করেও পাওয়া যায় না। তাই সময় পেলে ভালো উত্তম বন্ধুদের সাথে সময় কাটান কিছু। 

ভালো বন্ধু বললাম কারন ফ্রেন্ড সার্কেলে যদি এমন ২/১ জন থাকে যারা আপনার অতীত নিয়ে কিংবা দুর্বলতা নিয়ে ট্রল করে জোক্স বলে আড্ডায় রস আনার চেষ্টা করে তাহলে তেমন বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা উচিত। 

আমরা যাদের বন্ধু ভাবি সবাই আমাদের বন্ধু না। আপনি যদি ভেবে দেখেন তাহলে দেখবেন আপনার ভালো চাই এমন বন্ধু খুব ই কম । আড্ডা দিলে, কোথাও ঘুরতে গেলেই বন্ধু হয়ে যায় না। 

৮। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন।

এই পয়েন্ট এর বিস্তারিত আগের পয়েন্টে মোটামোটি বলা আছে। 

৯। রুম ক্লিন করুন।

একজন মানুষের সব দিন মন খারাপ হয় না। মাঝে মাঝে হয়। আপনার যদি হুট করে মন খারাপ হয় তাহলে নিজের রুম গোছ গাছ করুন। নিজের সব নতুন করে গুছিয়ে রাখুন। এটা অনেকটা মেয়েদের মেকাপ করার মত একটা বিষয়! মেয়েরা মেকাপ করলে অনেকটা স্ট্রেস ফ্রি হয়ে যায়, হালকা লাগে। আমরা ছেলেরা তো মেকাপ করতে পারবো না তাই আমাদের ঘর কে সুন্দর করে মন হালকা করা।

১০। কোরান পড়ুনঃ

কোরান পড়ুন। আমি বলবো না সবার সব সময় কোরান পড়ে মন ভালো হবেই বা এমন কিছু কিন্তু কোরআনের অর্থ পড়লে আপনি এমন কিছু আয়াত পেয়ে যাবেন যা আপনাকে আশা দিবে, নতুন করে ভাবতে শেখাবে।

১১। কোরান তেলওয়াত শুনুন। 

অনেকে বলে গান শুনতে! গান শুনলে নাকি মন ভালো হয়!! আসলে হয় উল্টা(!) গান শুনলে আরো মন খারাপ বৃদ্ধি পায়। এজন্য দেখবেন যারা সুইসাইড করে তাদের মধ্যে গান শোনার ঝুক এর ইতিহাস পাওয়া যায়। এমনিতেই মন খারাপ তার উপর গান শুনে যখন মন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তখন অনেকে আবেগের বসে সুইসাইড করে বসে আর ভাবে সে মরলে বুঝি অনেকে কষ্টে হা হুতাস করে দুনিয়া উল্টাই ফেলবে!!!  

আপনার যদি মন খারাপ হয় তাহলে ভুলেও গানের দিকে যাবেন না। ভুলেও না। বাইরের শব্দ থেকে বাচতে যদি ইয়ার ফোন দিয়ে কিছু শুনতেই হয় তাহলে কোরান শুনুন। 

১২। মাফ করতে শিখুন।

আমরা মাফ করতে যত পারবো তত আমাদের লাইফে ভার কমে যাবে আশা করি। ও এটা কেন করলো সে কেন বলল এমন হাজারো অভিযোগ অভিমান মনে জমতে জমতে মন হয়ে যায় দুঃখের গুদাম ঘর!

অথচ আপনি সেসব গুলো কে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই সারাদিনে কে কি করলো এসব ভেবে মাফ করে দিয়ে ঘুমান। মনে ভার জমবে না উলটা ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে। ট্রাই করে দেখতে পারেন।

১৩। পরিবর্তন কে মেনে নিন।

৫ বছর আগের আপনি আর এখনের আপনি এক না। আমরা সবাই পরিবর্তন হয়। কেউ বেশি কেউ কম তাই পরিবর্তন কে মেনে নিন মানিয়ে নিন। 

১৪। নতুন কিছু শিখুন।

আপনি যখন কোন দরকারি কাজে বিজি থাকেন তখন কি আপনার মন খারাপ হয়? আমাদের মন খারাপ, কে কি দিলো নিলো এসব হিসাব সব কিছু আমাদের উপর ভর করে যখন আমরা ফ্রি থাকি তখন। তাই অবসর সময়ে অলস বসে বসে হাজারো চিন্তা না করে বরং নতুন কিছু শিখুন। শিখতে না পারলেও জানুন। দেখবেন এমন কিছু জানতে পারবেন যা অনেকে জানেনা তখন আপনার মনটাই ভাল হয়ে যাবে। ইনশা আল্লাহ্‌। 

১৫। বাবা মা ও পরিবারকে সময় দিন।

আপনি যদি বিবাহিত না হোন তাহলে বাবা মা ভাই বোন কে সময় দিন। ওদের সাথে গল্প করুন। আর যদি বিবাহিত হোন তাহলে স্ত্রী কে নিয়ে গল্প করুন সবাই মিলে।

  1. সবসময় আনন্দে থাকার উপায়
  2. সুখে থাকার উপায়
  3. মন হাসি খুশি রাখার উপায়
  4. একা ভালো থাকার উপায়
  5. সুখে থাকার উপায়

পরিশেষেঃ

মন খারাপ, মন ভালো। হাসি খুশি এসব আমাদের জীবনের অংশ। আমি আপনি যতই টিপস ফলো করিনা কেনো আমাদের মন খারাপ হবেই, আমাদের দুঃখ লাগবেই। আমরা আশা করবো , আশা পূরণ না হওয়ার কষ্ট পাবো। এসব আছে বলেই আমরা আশা পুরনের আনন্দ বুঝি। 

অন্ধকার ছাড়া যেমন আলো বুঝা যায় না তেমনি দুঃখ কষ্ট ছাড়া আনন্দ খুশি প্রাপ্তি এসবও বুঝা যায় না।

আর মনে রাখা দরকার এটা দুনিয়া, জান্নাত না। দুনিয়াতে বিলিওনারও যেমন রাতে কষ্টে ভুগে তেমনি ফকিরও। তাই আপনার যা আছে সেসব এর জন্য আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া জানান। ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করুন সামনে এগিয়ে যান ইনশা আল্লাহ্‌ আপনার মন খারাপ মুছে যাবে খারাপ সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে। 

Next Post Previous Post